বেড়েছে দুর্যোগ, হুমকিতে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বেড়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত। বাংলাদেশের ঢাল হিসেবে পরিচিত সুন্দরবনকে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে। দিন দিন এই দুর্যোগের সংখ্যা বাড়ছে। এতে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে। গত কয়েকদিন ধরে নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে গেছে এই বনের নতুন নতুন এলাকা। বিষয়টি নিয়ে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বন কর্মকর্তারা। 

বন বিভাগের কর্মীরা বলছেন, আগে বছরে দুই-একটি ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানতো বাংলাদেশে। এখন সুন্দরবনকে অন্তত ছয় থেকে সাতটি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কেবলমাত্র জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা। এছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় বনের বিভিন্ন এলাকায় নোনা পানি প্রবেশ করছে। এতে বন্যপ্রাণীর পানযোগ্য পানির অভাব দেখা দিয়েছে। এসব বিভিন্ন কারণে হুমকির মুখে রয়েছে বনের প্রাণীরা।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কথা হয় পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী ও প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত চার দিনে সুন্দরবনে জোয়ারের পানির উচ্চতা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বন্যপ্রাণী হুমকির মুখে আছে। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে জোয়ারের পানি বেড়ে তলিয়ে যাচ্ছে করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রসহ সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে বন্যপ্রাণীর ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ বন কর্মকর্তা আরও বলেন, এই মুহূর্তেই সুন্দরবনের ভেতরে কিছু কিছু জায়গা উঁচু ঢিবি করে দেওয়া প্রয়োজন। এতে জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসের সময় বনের বন্যপ্রাণীগুলো আশ্রয় নিয়ে টিকে থাকতে পারবে।

এদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় নিচু অঞ্চলগুলোতে লোনা পানি ঢুকে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রেরও ব্যাপক পরিবর্তনের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি গত চার থেকে পাঁচ দিন ধরে ঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ প্রবল জোয়ারের পানিতে সুন্দরবন তলিয়ে যায়। এছাড়া স্থানীয়দের চিংড়ি ঘেরের ব্যাপক ক্ষতিসহ ৪০৪ হেক্টর জমিও টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে যায়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন প্রধান ড. আব্দল্লাহ হারুন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবন এলাকার মানুষের জীবনচক্রে পরিবর্তন এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশ্বিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সুন্দরবন ব্যবহারকারীদেরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। 

তবে বনের কোনও ক্ষতি হতে দেওয়া হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুননাহার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপরে কারও হাত নেই। তবে যে কোনও দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার আন্তরিক রয়েছে। এ সময় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশেষজ্ঞদের সুন্দরবন ক্ষতির আশঙ্কার প্রশ্নে তিনি বলেন, বনের কোনও ক্ষতি হবে না, এজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া সুন্দরবনে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বনের অভ্যন্তরে প্রায় শতাধিক মিষ্টি পানির পুকুর সংস্কারের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।