বেঁচে থাকলে সবচেয়ে খুশি হতেন সাবিনার বাবা

সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবারের মতো ট্রফি জিতেছে বাংলাদেশ। জয়ে বড় অবদান রেখেছেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। টুর্নামেন্টে ৮ গোল করে সর্বোচ্চ গোলাদাতা হয়েছেন। সেইসঙ্গে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও।

সাতক্ষীরার পিটিআই মাঠ থেকে প্রথম যুদ্ধটা শুরু করেছিলেন সাবিনা। স্থানীয় কোচ আকবর আলীর হাত ধরে মাঠে আসা। এরপর আসতে শুরু করে নানা বাধা-বিপত্তি। সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে সফলতার পথে হাঁটছিলেন। তার আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরা। সেইসঙ্গে গোটা বাংলাদেশও। তার সফলতায় জেলার মানুষের মধ্যে বইছে উৎসবের আমেজ। ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে সাবিনা গোল না পেলেও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার গৌরবে ভাসছে সাবিনার পরিবার ও এলাকাবাসী।

সাতক্ষীরা শহরের জজ কোর্টের পেছনে এক টুকরো জমি কিনে বসবাস করে সাবিনার পরিবার। পাঁচ বোনের মধ্যে সাবিনা চতুর্থ। বড়বোন সালমা খাতুন বাড়িতে থাকেন, মেজো বোন হালিমা খাতুন দেশের বাইরে, সেজো বোন শিরিনা খাতুন স্বামীর সংসারে আছেন এবং ছোটবোন মুন্নি আক্তার একাদশ শ্রেণিতে পড়েন। সাবিনার বাবা সৈয়দ আলী গাজী মারা গেছেন ২০২০ সালে। পিতাহীন সংসারের দায়িত্ব সাবিনার বড়বোন সালমা খাতুনের কাঁধে। তিনিই পুরো পরিবার পরিচালনা করেন।

সাবিনার সেজো বোন শিরিনা খাতুন

মেয়ের সাফল্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সাবিনার মা মমতাজ বেগম বলেন, ‌‘ছোটবেলা থেকেই খেলার প্রতি আগ্রহ সাবিনার। কিন্তু অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। প্রতিবেশী ও আশপাশের মানুষের নানা কথা শুনতে হয়েছে। তবে তার বাবা সবসময় সাহস জুগিয়েছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। মেয়ে যেখানেই খেলতে যেতো বাবা সঙ্গে যেতেন। আবার সঙ্গে নিয়ে আসতেন। আজ তার বাবা বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।’

তিনি বলেন, ‌‘ছোটবেলা থেকেই অভাব-অনটন আর দারিদ্র্যের সঙ্গে আমাদের বসবাস। মেয়েটার জীবন ছিল সংগ্রামের। আমার বড় ও মেজো মেয়ে অনেকটাই স্বাবলম্বী। সাবিনা তো এখন তারকা। আসলে তার দলের সব মেয়েই এখন তারকা। তাদের সাফল্যে আমি খুবই আনন্দিত।’

সাবিনার সেজো বোন শিরিনা খাতুন বলেন, ‘সোমবার সারাদিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছি খেলা দেখার জন্য। খেলা শুরুর পর যখন প্রথম গোল হলো তখন মনে প্রশান্তি পেলাম। দ্বিতীয় গোল হওয়ার পর নিশ্চিত হলাম, আমরা জয়ী হচ্ছি। বোনের স্বপ্নপূরণ হচ্ছে। বড় আসরে জয়ী হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। খেলা শেষে যখন সাবিনা টুর্নামেন্ট সেরা হলো তখন চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু ঝরছিল। বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল। কারণ বাবাই আমাদের একমাত্র অনুপ্রেরণা ছিলেন। বাবা বেঁচে থাকলে কতই না খুশি হতেন।’

সাবিনার বাড়ি

তিনি বলেন, ‘সাবিনার এই সফলতার পেছনে বেশি অবদান আকবর আলী স্যারের। তাকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি। তিনি বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে তার আনন্দের শেষ থাকতো না। পুরো গ্রামে উৎসব ছড়িয়ে দিতেন।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, সাতক্ষীরার কোচ আকবর আলী বিভিন্ন ইভেন্টে  মেয়েদের কোচিং করাতেন। বিশেষ করে মেয়েদেরকে ফুটবল খেলায় উদ্বুদ্ধ করায় বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়দের হুমকির মুখে পড়েন। সব বাধা উপেক্ষা করে মেয়েদের কোচিং করিয়েছেন। বছর খানেক আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি।