জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্তদের উন্নয়নে সমষ্টিগত উদ্যোগ প্রয়োজন: বেলজিয়ামের রানি

বাংলাদেশের উপকূলের বাসিন্দারা দুঃখে-কষ্টে জীবনযাপন করছেন বলে জানিয়েছেন বেলজিয়ামের রানি মাথিল্ডে। তিনি বলেছেন, ‘উপকূলের বাসিন্দাদের বিশুদ্ধ খাবার পানির সমস্যা দূরীকরণে যৌথ উদ্যোগ বাস্তবায়নের কাজ চলছে। তারা দুঃখে-কষ্টে জীবনযাপন করছেন।’ 

উপকূলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ চলছে জানিয়ে বেলজিয়ামের রানি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার, দাতা সংস্থা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সমষ্টিগত উদ্যোগ প্রয়োজন। এই কাজে সফলতা অর্জনে বাংলাদেশ সরকার, দাতা সংস্থা কিংবা এনজিও কারও একার পক্ষে সম্ভব নয়।’

বুধবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খুলনা উপকূলীয় দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে উপকূলের বাসিন্দা ও দাতা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি। বিকালে সুতারখালী ইউনিয়নের ঝুলন্তপাড়া এলাকা পরিদর্শন করেন রানি। এ সময় ঝুলন্তপাড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। সেইসঙ্গে উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরতদের জীবন-সংগ্রাম, সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়ে ধারণা নেন। 

সুতারখালী ইউনিয়নের ঝুলন্তপাড়া এলাকা পরিদর্শন করেন রানি

পরে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ইউএনডিপি, ইউএনসিডিএফ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সুইডেন সরকারের অর্থায়নে এবং বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন পরিচালিত লজিক প্রকল্পের চলমান কার্যক্রম সম্পর্কে রানিকে বিস্তারিত জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এর আগে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে দুপুর ১টার দিকে সুতারখালীর নলিয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করেন রানি। এরপর সুতারখালী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের নিচতলায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউএনসিডিএফ’র আর্থিক সহায়তায় স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন লজিক প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে স্থানীয়দের পানি সংগ্রহ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। সেইসঙ্গে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন রানি। 

এ সময় রানির কাছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ততা সমস্যার কারণে অতীতে পানযোগ্য পানির সংকটের কথা তুলে ধরেন উপকারভোগীরা। তারা রানিকে জানান, আগে গ্রামীণ উৎস থেকে খাবারের পানি সংগ্রহের জন্য নারীদের পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরে যেতে হতো। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট হওয়ার পর সহজে লবণমুক্ত বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন তারা।

উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরতদের জীবন-সংগ্রাম, সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়ে ধারণা নেন বেলজিয়ামের রানি

এই সফরে রানির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। স্থানীয় সাংবাদিকদের তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পুরো উপকূলজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের যে ক্ষতিকর প্রভাব, তা এখানে না এলে কেউ অনুমান করতে পারবে না। এখানে প্রতি বছর বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস হয়, যা আমাদের নিত্যসঙ্গী। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত কীভাবে মোকাবিলা করছি, বেলজিয়ামের রানি তা দেখার জন্য এখানে এসেছেন। এখানকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন।’

দুপুরে বেলজিয়ামের রানিকে সুতারখালীতে স্বাগত জানান জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান। বিকালে নলিয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় ফেরেন রানি।