ইবাদত ও শুভেচ্ছা বিনিময়ে ঈদ উদযাপন করেন ষাটগম্বুজ মসজিদের ইমাম

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবের মধ্য দিয়ে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন মুসলমানরা। সারা দেশের মানুষের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছেন বাগেরহাটের মানুষজনও। প্রতি বছরের মতো এবারও জেলার প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ষাটগম্বুজ মসজিদে। ৬০০ বছরের পুরনো এই মসজিদে ঈদ জামাতে ইমামতি করেছেন বাগেরহাট আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কালাম শেখ। প্রতি বছর ঈদের দিনটি তিনি কীভাবে উদযাপন করেন, তা জানিয়েছেন বাংলা ট্রিবিউনকে।

মাওলানা আবুল কালাম শেখ বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে ষাটগম্বুজ মসজিদের প্রধান জামাতে ইমামতি করছি। আবার শহরের রেলরোড মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করছি। শনিবার এই মসজিদে প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হয়। পরে আরও দুটি জামাত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম জামাতে মুসল্লির সংখ্যা বেশি ছিল। প্রতি বছর তিনটি জামাত হয় এখানে।’ 

নিজের ঈদ উদযাপনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আনন্দের। এ জন্য দিনটিতে বিশেষ কিছু ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করতে হয়। এদিন ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে ঈদের নামাজের প্রস্তুতি নিই। প্রথমে গোসল করি, গোসল শেষে নতুন পোশাক পরি। সুন্নত অনুযায়ী সুগন্ধি ও সুরমা ব্যবহার শেষে হালকা নাশতা করি। এরপর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সালাম বিনিময় করে ঈদগাহে রওনা হই।’ 

মাওলানা আবুল কালাম শেখ বলেন, ‘ঈদের নামাজ শুরুর আগে মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান করেছি। পরে নামাজ শেষ করি। নামাজ শেষে খুতবা দিয়েছি। খুতবা শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে দোয়া করেছি। মসজিদ থেকে বের হয়ে প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মুসল্লিদের সঙ্গে কোলাকুলি এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। এরপর খান জাহান আলীর মাজারে গিয়ে তার কবর জিয়ারত করি। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছি। পরিবারের সবাইকে সালামি দিয়েছি। পরে খাওয়া-দাওয়া শেষে প্রতিবেশী ও স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটাই।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর প্রতিবেশীদের আপ্যায়ন করেছি। অন্যান্য ঈদে কেউ দাওয়াত দিলে সেখানে শরিক হই। এভাবে দুপুর গড়িয়ে যায়। পরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আছরের নামাজ পড়ি। অনেকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করি। আশপাশের মানুষের কবর জিয়ারত করি। তবে দূরে কোথাও যাওয়া হয় না। কারণ নিয়মিত মসজিদে ইমামতি করতে হয়। এভাবেই ঈদের দিনটি কেটে যায় আমার।’

ষাটগম্বুজ মসজিদ বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটির গায়ে কোনও শিলালিপি নেই। তাই এটি কে নির্মাণ করেছিলেন বা কোন সময়ে নির্মাণ করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী দেখলে বোঝা যায়, এটি খান জাহান আলী নির্মাণ করেছিলেন। ধারণা করা হয়, তিনি ১৫শ শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেন। মসজিদটি বহু বছর ধরে ও বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিল। পাথরগুলো আনা হয়েছিল রাজমহল থেকে। এটি দেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের একটি।