শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষিকাকে মারধর করা সেই যুবলীগ নেতাকে অব্যাহতি

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমানকে পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২৮ আগস্ট) রাতে যুবলীগের মণিরামপুর পৌর শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক পত্রে এই অব্যাহতি দেওয়া হয়।

মিজানুর রহমান মণিরামপুর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের সদর আলী দফাদারের ছেলে। তিনি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ছিলেন।

গত মঙ্গলবার দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে এক শিক্ষিকাকে মারধর করেন। ওই দিনই ভুক্তভোগী শিক্ষিকা তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ দুই দিন পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। পরদিন আদালতে সোপর্দ করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ ঘটনায় যুবলীগের মণিরামপুর পৌর শাখার সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি স্বাক্ষরিত নোটিশে উল্লেখ করা হয়, গত ২৩ আগস্ট দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও সম্মানহানির বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। যা যুবলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও নেতা করতে পারেন না। এসব কর্মকাণ্ড দলীয় শৃঙ্খলা লঙ্ঘন ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। এতে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। গঠনতন্ত্রের ২২ (ক) অনুচ্ছেদ মোতাবেক আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।

সোমবার রাতে স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গ ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এতে সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। গত ২৭ আগস্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তার কোনও জবাব পাওয়া যায়নি। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নির্দেশে গঠনতন্ত্রের ২২ (ক) অনুচ্ছেদ মোতাবেক মিজানুর রহমানকে দুর্গাপুর ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করা হলো।

এদিকে, মিজানুর রহমানকে নির্দোষ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার স্ত্রী রহিমা খাতুন। তার দাবি, সেদিন আমার স্বামী তাকে মারধর করেননি।

প্রসঙ্গত, মিজানুর রহমানের ছেলে দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। গত মঙ্গলবার বিদ্যালয়ের ক্লাস নিচ্ছিলেন ওই শিক্ষিকা। এ সময় রাকিবুল ইসলাম এবং আরও দুই-তিন ছাত্র শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত নতুন লাগানো বেসিনের ট্যাপ খোলার চেষ্টা করছিল। দেখতে পেয়ে তিনি তাদের নিষেধ করেন। তিনি তাদের পুরান বেসিনটি ব্যবহার করতে বলেন। এ সময় যুবলীগ নেতার ছেলে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে গালাগাল শুরু করে। 
একপর্যায়ে শিক্ষক তাকে ধমক দেন। সঙ্গে সঙ্গে সে বিদ্যালয়ের পাশেই বাড়িতে গিয়ে নালিশ করে। এরপর তার বাবা মিজানুর রহমান এবং মা বিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষার্থীদের সামনে মিজানুর রহমান শিক্ষিকাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি তাকে এলোপাতাড়ি চড়, কিল, ঘুষি এবং লাথি মারতে থাকেন। এরপর তিনি চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে বিদ্যালয়ের মাঠ চত্বরে নিয়ে ফের মারধর করেন। পরে দুর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষকরা এসে তাকে নিবৃত করেন।