নড়াইলে শত বছরের পাগল চাঁদের মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়

নড়াইল জেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের হিজলডাঙ্গায় অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী পৌষ মেলায় আসা দর্শনার্থী নারী,পুরুষ ও শিশুর ভিড় জমেছে। স্থানীয়রা এ মেলাকে পাগলচাঁদের মেলা বলে জানেন।

আধ্যাত্মিক সাধু পাগলচাঁদের স্মরণে প্রায় একশ বছর ধরে এ মেলা চলে আসছে বলে জানালেন মেলা কমিটির সভাপতি স্কুল শিক্ষক স্বপন কুমার রায়। বাক্যসিদ্ধ মহাপুরুষ পাগলচাঁদ বাইরে থেকে হিজলডাঙ্গায় এসে ধ্যানজ্ঞানে মগ্ন থাকতেন। জীবদ্দশায় অনেক অলৌকিক ঘটনার অবতারণা করেন তিনি।আনুমানিক ১৯৩৫ সালে তিনি মারা যান বলে জানান সভাপতি।

প্রথমদিকে স্বল্পপরিসরে এ মেলা শুরু হলেও বর্তমানে এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ মেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মেলা উপলক্ষে আসা ভক্তদের জন্য হিজলডাঙ্গার প্রতিটি বাড়িতে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলাকে ঘিরে দূরে থাকা প্রত্যেক বাড়ির আত্মীয়-স্বজনও বেড়াতে এসেছেন।

মেলা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল থেকে এলাকার লোকজনসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা নারী-পুরুষ দর্শনার্থী জড়ো হতে থাকেন। শিশুদের আগমনও কমতি ছিল না। মেলায় বাহারি সব খাবার আর তৈজসপত্রের মিশেলে উৎসবে মেতে ওঠেন দর্শকরা। শিশু-কিশোরদের হই-হুল্লোড়ের পাশাপাশি সব বয়সী নারী-পুরুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় এই মেলা।

শুরুতে মেলাটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও বর্তমানে তা সব ধর্মের মানুষের উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রায় শত বছর ধরে চলে আসা এ মেলায় নানা রকম গ্রামীণ পণ্য পাওয়া যায়। নড়াইলসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। সন্ধ্যার  মোমবাতি প্রজ্বালন মেলার আকর্ষণকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। মেলায় এবার গ্রামীণ পণ্যসহ প্রায় ২০০ স্টল বসেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নানা বয়সী মানুষের পদচারণায় মেলা প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে উঠেছে। মৃৎশিল্পের পাশাপাশি বস্ত্রশিল্পেরও দেখা মেলে এই মেলায়। মাটির তৈরি নানা তৈজসপত্র উঠেছে মেলায়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্টলে আধুনিক খেলনার সমাহারও দেখতে পাওয়া যায়। নাগরদোলায় ওঠার জন্য শিশুদের লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বাহারী পান, পাপড়, তিলের খাজা, কদমা, টক-মিষ্টি আচার এবং বিভিন্ন রকমের মিষ্টান্ন কিনে বাড়িতে ফিরে যেতে দেখা যায় মেলায় আসা দর্শনার্থীদের।

মেলায় ঘুরতে আসা নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী মোহনা সাহা জানান, এবার প্রথম মেলায় আসা তার। খুব আনন্দ লাগছে বলে জানান।

শহরের ভাদুলীডাঙ্গা থেকে দর্শনার্থী চিন্ময় দাস ও প্রাপ্তি দাস জানান, মজা করে আমরা বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখছি। খুব আনন্দ পাচ্ছি। স্টল থেকে মিষ্টি পান কিনে খেয়েছি।

যশোরের ধলগ্রাম এলাকা থেকে মেলায় মিষ্টি পান বিক্রি করতে আসা শাহাবুল জানান, প্রতিটি পান ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছি। অনেকে শখ করে পান কিনে খাচ্ছেন।

মেলার কমিটির উপদেষ্টা মুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ অধিকারী জানান, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এ মেলার আয়োজন। পাগল চাঁদকে আধ্যাত্মিক সাধক মনে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এখানে এসে থাকেন। পৌষ মেলায় আনন্দ পেতে অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও আগমন ঘটে। স্বল্প খরচে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীদের স্টলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নড়াইল সদর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, মেলায় আসা দর্শনার্থীরা বিনোদন শেষে যাতে শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ফিরতে পারেন সে লক্ষ্যে মেলাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।