একান্ত সাক্ষাৎকারে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র

‘দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স’

তাজকিন আহমেদ চিশতীসাতক্ষীরা জেলা সদরে অবস্থিত সাতক্ষীরা পৌরসভা ১৮৬৯ সালে ৩১.১০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে খুলনা বিভাগের প্রথম পৌরসভা হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৯৮ সালে এটি প্রথম শ্রেনির পৌরসভায় উন্নীত হয়। ৯ টি ওয়ার্ডে ৪০টি মহল্লা নিয়ে গঠিত পৌরসভায় বর্তমান প্রায় ৭৯ হাজার মানুষ বসবাস করছে। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে তাজকিন আহমেদ চিশতি  সাতক্ষীরা সদর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। বুধবার সকালে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মিলিত হন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. আসাদুজ্জামান।

বাংলা ট্রিবিউন: মেয়র হিসেবে পৌর এলাকা নিয়ে আপনার প্রথম পরিকল্পনা কী

তাসকিন আহমেদ চিশতি: দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র পদে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, সর্বাত্মকরণে চেষ্টা করবো তার সেই বিশ্বাস ও আস্থাকে ধরে রাখতে। বাবা আবুল কাশেম ভ্যাদল সাতক্ষীরা পৌরসভার মেম্বার ছিলেন। চারবার ভোটে জিতে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। আমিও বাবার মতো সাতক্ষীরা পৌরবাসীর সেবা করতে চাই। আমি মেয়র নয় সেবক হতে চাই। আমার ধারণা সাতক্ষীরা শহরের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা প্রাণ সায়ের খালের সংস্কার সাধন, বেতনা নদী রক্ষা করাসহ নগরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন করে একটি দূষণমুক্ত এলাকা গড়ে তুলবো। সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এখানে মাদকের ভয়াবহতা বেশি। পৌরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে মাঠে নামবো।

বাংলা ট্রিবিউন: সরকারের কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা আশা করেন? এবিষয়ে অসহযোগিতার কোনও আশঙ্কা আছে কি?

তাসকিন আহমেদ চিশতি: আমি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে ভোটে জয় পেয়েছি। আমি কোন দলের সেটি বড় কথা নয়। সবাই আমাকে ভোট দিয়েছে, আমিও দল-মত নির্বিশেষে পৌর এলাকার উন্নয়নে সবাইকে নিয়ে কাজ করার জন্য এসেছি। সাতক্ষীরা পৌরসভায় সরকারবিরোধী দল, বিরোধী দল বলে কোনও কথা নেই। পৌরসভায় এসে সবাই সমান সুযোগ পাবে। উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে সরকারি নেতারা, সরকারি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ সরকারের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সাতক্ষীরা পৌরসভাকে মডেল পৌরসভা করতে সাহায্য চাই। ভোটের আগে আমি ও কাউন্সিলরা যে সসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সেসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করতে সরকারের সাহায্য অবশ্যই আমাদের প্রয়োজন। আমারও সরকারের সকল কাজে সহযোগিতা করবো।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার ওপর হামলা বা মামলার কোনও আশঙ্কা করেন কি?

তাসকিন আহমেদ চিশতি: ভোটের দুইদিন পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগে বিএনপির সাত নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ, যা এক ধরনের আশঙ্কা তৈরি করেছিল। এ মুহূর্তে কোনও হামলা বা মামলার আশাঙ্কা করছি না। এছাড়া রাজনীতি করতে এলে এগুলো মেনে নিতে হবে। আমি রাজনীতিকর্মী হিসেবে রাজনীতির সকল পরিণতি মেনে নেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে তবেই নির্বাচন করেছিলাম।

বাংলা ট্রিবিউন: পৌরসভাগুলোর উন্নয়নে সরকার প্রতি বছর যে বাজেট পাঠায় তা কতোটা কার্যকর?

তাসকিন আহমেদ চিশতি: সরকার যে বাজেট পৌরসভার  জন্য রাখে তা শতভাগ কার্যকর। কিন্তু এটাও সত্য যে পৌরসভার জন্য বাজেট খুব সীমিত।

বাংলা ট্রিবিউন: একই সড়ক নির্মাণের দুই-এক বছর পর আবার ভেঙে যায়। উন্নয়ন নির্মাণ কাজের তদারকির ক্ষেত্রে পৌর কর্তৃপক্ষ কতো দায়বদ্ধ মনে করেন?

তাসকিন আহমেদ চিশতি: সড়ক নির্মাণে দায়সারা গোছে কাজ করা হয়। এজন্য সড়ক নির্মাণের দু’একবছর পর ভেঙে যায়। পৌরসভার রাস্তা ঘাট ড্রেন নির্মাণের জন্য  সীমিত বাজেট থাকে। এই সীমিত বাজেট কাজে লাগিয়ে পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করতে পৌরসভার কাউন্সিলর ইঞ্জিনিয়ার ও পৌর নির্বাহীর নেতৃত্বে বোর্ড গঠন করে এবার আমি নিজে তদারকির ব্যবস্থা করবো। উন্নয়নকার্যে দুর্নীতি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবো। সাতক্ষীরা পৌরসভায় থাকবে।

বাংলা ট্রিবিউন: পৌরসভার উন্নয়ন কাজের দরপত্র নিয়ে প্রায়ই নানা ধরনের বিশৃঙ্খলার মুখোমুখি হতে হয়। এর বিরুদ্ধে আপনি কী পদক্ষেপ নেবেন?

তাসকিন আহমেদ চিশতি: এখন সবকিছু অনলাইনে হচ্ছে। ই-টেন্ডারে ভূঁইফোঁড় ঠিকাদারদের জন্য কোনও সুযোগ থাকবে না। টেন্ডার প্রক্রিয়া সুষ্ঠু এবং সঠিক যেন হয় এবং প্রকৃত ঠিকাদার যেন কাজ পায় সে চেষ্টা করবো।

সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতী

বাংলা ট্রিবিউন: পৌর নাগরিকদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন থাকবে?

তাসকিন আহমেদ চিশতি: পৌরসভার নাগরকিদের সঙ্গে শতভাগ সম্পৃক্ততা রাখবো। পৌরসভায় সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের বলেছি আমাকে ভালোবাসার আগে আমার পৌর নাগরিকদের ভালোবাসতে হবে। পৌরসভায় মানুষ এসে যেন সকলে হাসি মুখে ফিরে যায়। আমাকে একবার সালাম দিলে তাদেরকে দশবার সালাম দিতে হবে। সেবার প্রশ্নে কোনও ছাড় নেই। পৌরভবনে সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে দেবো না। সাতক্ষীরা পৌরভবন এখন থেকে সাধারণ মানুষের ভবন।

/এইচকে/