খুলনায় আসছে না ভোলার গ্যাস, ঈদের পর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

ভোলা-বরিশাল-খুলনা গ্যাস পাইপলাইনের রুট পরিবর্তন হচ্ছে। ভোলা-বরিশাল অংশ অপরিবর্তিত রেখে রুট পরিবর্তন হয়ে গ্যাস যাচ্ছে ঢাকা। নতুন রুট ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পেট্রোবাংলা।

এদিকে গ্যাস পাইপলাইনের রুট পরিবর্তনে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি ও বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির নেতারা।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, ‘বরিশাল-খুলনা পাইপলাইনও হবে, তবে প্রথম ধাপে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে, বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ৫ মার্চ ফাইল স্বাক্ষর করেছি।’

সূত্র বলছে, ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা নিতে গেলে ১৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন দরকার। কয়েক দশক ধরেই পাইপলাইন নিয়ে আলোচনা চলে আসছে। ১৫০ কিলোমিটার পাইপলাইনে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা খরচের প্রাক্কলন করা হয়। গ্যাস মজুত বেশি না থাকলে পাইপলাইনের খরচ উঠবে কীভাবে, অর্থায়নে নিশ্চয়তা চাইবে ঋণদাতারা। ২০০৪ সালে পাইপলাইন নির্মাণে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক সেই গ্যারান্টি চাইলে প্রকল্প ভেস্তে যায়। অর্থায়ন ইস্যু নিয়েই বিষয়টি ঝুলেছিল এতদিন। ৭ হাজার কোটি টাকার জন্য যখন পাইপলাইন আটকা, তখন এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে ৬৪৯ কোটি টাকা। যা দেশের ১ দিনের চাহিদার (৩০০০ মিলিয়ন) সমান। যার বিপরীতে কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করা হচ্ছে এফএসআরইউ ভাড়া হিসেবে। চলতি বছরে ১১৫ কার্গো এলএনজি আমদানি করতে চায় পেট্রোবাংলা।

‘রুট পরিবর্তন, ভোলার গ্যাস খুলনার বদলে আগে যাবে ঢাকায়’ এমন সংবাদে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খুলনা বিএনপি নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহ করার লক্ষ্যে ২০১২ সালে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে খুলনার আড়ংঘাটা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। স্থাপন করা হয় গ্যাস ট্রান্সমিশন ল্যান্ড ফিল্ডও। এরপর এক যুগ কেটে গেলেও খুলনার কোথাও সরবরাহ করা হয়নি গ্যাস। বছরের পর বছর এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়ে আসলেও তা থেকেছে উপেক্ষিত। অতি সম্প্রতি ব্যবসায়ীরা আবারও তাদের দাবি জোরদার করলে নতুন করে গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয় সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি। প্রথম পর্যায়ে খুলনা বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় সরবরাহ করার কথা এ গ্যাস। কিন্তু এরই মধ্যে ভোলা-বরিশাল অংশ অপরিবর্তিত রেখে পেট্রোবাংলা ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা আত্মঘাতী ও খুলনা অঞ্চলের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সুকৌশলে ধ্বংসের নীলনকশা মাত্র।

বিএনপি প্রদত্ত বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বরিশাল-খুলনা পাইপলাইনও হবে, তবে প্রথম ধাপে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। খুলনা বিএনপি অবিলম্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে প্রথম ধাপে খুলনায় গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়ে আরও বলে, চলতি বছরের জুন মাসে খুলনায় গ্যাস সরবরাহের খবরে উচ্ছ্বসিত ছিল এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি বিসিক শিল্প এলাকায় বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়ার আশা ছিল তাদের। যেসব প্রতিষ্ঠান গ্যাস-সংযোগের জন্য আবেদন করেছে, ইতোমধ্যেই সে সকল প্রতিষ্ঠান এনওসিও সংগ্রহ করেছে। খুলনা শিল্পাঞ্চলের অনেক প্রতিষ্ঠান লোকসানের কারণে বন্ধ হয়েছে। গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হলে বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো আবারও চালু হবে। সেইসঙ্গে ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানগুলোও লাভের মুখ দেখবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান হবে। সব মিলিয়ে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে সম্ভাবনা বাড়বে। নেতৃবৃন্দ প্রথম ধাপে খুলনায় গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় খুলনাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

বিবৃতিদাতারা হলেন- বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাড. শফিকুল আলম মনা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবু হোসেন বাবু প্রমুখ।

অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা না হলে ঈদের পর কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে বিবৃতি প্রদান করেছেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান, মহাসচিব অ্যাড. শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ।