খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ ও লাঞ্ছনার ঘটনায় শিক্ষকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে ক্লাসে ফিরতে চান শিক্ষার্থীরা। তবে কর্মবিরতিতে অনড় রয়েছেন শিক্ষকরা। একইসঙ্গে সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় দোষীদের বিচারিক কার্যক্রম ১৯ মে দুপুরের মধ্যে শেষ না হলে ওই দিন উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। পাশাপাশি একাডেমিক কার্যক্রমের সঙ্গে প্রশাসনিক কার্যক্রমও বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।
রবিবার (১৮ মে) দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে শিক্ষকরা দাবির বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বাইরে গিয়ে প্রশাসন দোষীদের বিচার কার্যক্রম স্থগিত করে রেখেছে। যার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম সংকটের মধ্যে পড়েছে। মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থীর স্বার্থরক্ষায় এবং ওপর মহলের অদৃশ্য শক্তিকে তুষ্ট করছে বর্তমান প্রশাসন। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে প্রশাসন সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত না নিলে উপাচার্যের কার্যালয়ে অবস্থান ধর্মঘট পালন করবে শিক্ষক সমিতি।
এদিন দুপুর ১২টার দিকে সব অপরাধের বিচার ও একাডেমিক কার্যক্রম চালুর দাবিতে উপাচার্যের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন শিক্ষার্থীরা। পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভিসির কাছে এ দাবি জানান। তারা সব অপরাধের বিচার অতি দ্রুত সম্পন্ন করে একাডেমিক কার্যক্রম চালুর অনুরোধ জানান।
লিখিত আবেদনে শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রতি গভীর উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করছি। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা সব অন্যায়ের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং তদন্তসাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে তারা বলেন, চলমান আন্দোলনের সময় কিছু অতিউৎসাহী শিক্ষার্থীর দ্বারা আমাদের পিতৃতুল্য শিক্ষকদের প্রতি লাঞ্ছনা ও অসম্মানের যে ঘটনা ঘটেছে, তার ফলে শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। আমরা সকল শিক্ষকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী এবং তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিচার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমেই হোক।
বিচার বিভাগীয় তদন্তের বিরোধিতা করে তারা আরও বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের ৫ দফার যৌক্তিক দাবির প্রতিও সমর্থন জানাচ্ছি। তবে কতিপয় শিক্ষার্থী দ্বারা বহিরাগত ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করার যে দাবি করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে অবস্থান জানাচ্ছি। প্রস্তাবিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি দ্বারা তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘায়িত হবে যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আরও বাড়াবে ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আস্থা রেখে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখি এবং আমরা বিশ্বাস করি তাদের মাধ্যমেই ন্যায়বিচার কার্যকর হবে এবং কোনও নির্দোষের শাস্তি হবে না এই ভরসা রাখি। গত তিন মাস যাবৎ কুয়েটে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে আমরা যেন অতি দ্রুত একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরতে পারি এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে শতাধিক মানুষ আহত হন। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে সরিয়ে দেয় সরকার। এরপর ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধ্যাপক হজরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর কয়েকদিন পর থেকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষকরা। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে।