কুঠিবাড়ি থেকে চুরি হাওয়া তরবারি এখনো উদ্ধার হয়নি

কুষ্টিয়ার শিলাহদহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী। এখান থেকেই তরবারি দুটি চুরি হয়।

কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ি থেকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত দুটি তরবারি চুরি হাওয়ার চারদিন পার হলেও তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই নিয়ে কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সচেতন মহলের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত কেন তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কুঠিবাড়ি সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যার আগে কুঠিবাড়িতে দর্শনার্থী প্রবেশের প্রাত্যহিক সময় শেষ হওয়ার পর সেখানে সংরক্ষিত সব মালামাল গণনা শেষে প্রথম ফটক সিলগালা করে দেওয়া হয়। পর দিন বৃহস্পতিবার সকালে দর্শনার্থীদের জন্য কুঠিবাড়ি খুলে দেওয়ার আগে দেখা যায় একটি কক্ষের শোকেসে রাখা প্রাচীন আমলের দুষ্প্রাপ্য দুটি তরবারি নেই। তবে সে সময় প্রধান ফটকের তালার সিলগালা অক্ষত ছিল। এ ঘটনায় কুমারখালী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করে কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান (জিম্মাদার) মখলেচুর রহমান ভুঁইয়া।

প্রসঙ্গত, দর্শনার্থীদের দেখার জন্য রবিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুঠিবাড়ি খোলা থাকে। সন্ধ্যার পর সব মালামাল গণনা শেষে প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে সিলগালা করে দেওয়া হয়। এই একটি মাত্র দরজা দিয়েই কুঠিবাড়ির মূল ভবনে ঢোকা যায়। এছাড়াও সেখানে প্রত্নতত্ব অধিদফতরের নিরাপত্তাকর্মীসহ ১০ সদস্যদের একটি স্থায়ী আনসার ক্যাম্প কুঠিবাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে। তাদের কাছে অস্ত্রও থাকে। এরকম একটি সুরক্ষিত ভবন থেকে কিভাবে দুটি দুষ্প্রাপ্য প্রত্নতাত্বিক সামগ্রী চুরি হয়ে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুঠিবাড়ির এক কর্মী জানান, কাস্টোডিয়ান মখলেচুর রহমানের গাফিলতির কারণেই এটা হয়েছে। তার দাবি কুঠিবাড়ির মূল ভবনের পূর্ব পাশে অবস্থিত কাস্টোডিয়ান ভবনে মখলেচুর রহমান গভীর রাত পর্যন্ত বাইরের লোকজন নিয়ে আড্ডা দেন। তার আসকারায় অনেক মাদকসেবিও রাতে বেলা কুঠির বাড়ির আম বাগানে আড্ডা দেয়।

আনসার ক্যাম্পের কমান্ডার (পিসি) বাবুল মণ্ডল বলেন, আনসার সদস্যরা মূল ভবনের বাইরে দায়িত্ব পালন করেন। ভেতর থেকে কখন যে এ চুরির ঘটনা ঘটেছে তা ঠিক বুঝতে পারছি না। এখানে আনসার সদস্য ছাড়াও প্রত্নতত্ব বিভাগের নিরাপত্তা কর্মীও রয়েছেন।

কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক কর্মী গৌতম কুমার রায় বলেন, কুঠিবাড়ির চারদিকে কঠোর পাহারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে থেকে তরবারি চুরি হয়ে যাওয়া খুবই লজ্জাজনক। তিনি আরও বলেন, এর আগে পশ্চিমবাংলার শান্তিনিকেতন থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাওয়া নোবেল পুরস্কার চুরি হয়েছে। তিনি তরবারি চুরির পেছনে কোনও আন্তর্জাতিক চক্র থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

কুমারখালী থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, কুঠিবাড়ি কর্তৃপক্ষ দুটি তরবারি খোয়া গেছে মর্মে একটি সাধারণ ডায়রি করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে প্রত্নতাত্বিক বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) আফরোজা খান মিতা জানান, কুঠিবাড়িতে থাকা দুটি তরবারি পাওয়া যাচ্ছে না। চুরির ঘটনাটি খুব দুঃখজনক। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত টিম গঠন করা হবে। তদন্ত শেষে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কারও দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেন, চুরির ঘটনা তাকে কেউ জানাননি। তবে এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক।

/জেবি/