ময়মনসিংহে ১০ বছরে পাটের উৎপাদন বেড়েছে দেড় গুণের বেশি

ফাইল ছবিবাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন ময়মনসিংহের চাষিরা। ১০ বছরের ব্যবধানে জেলায় পাট চাষ বেড়েছে তিন হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে।

পাট গবেষকরা বলছেন, বর্তমান সরকার পাটকে নানামুখী কাজে ব্যবহার করায় পাটের দাম বেড়ে গেছে। ফলে চাষিরা আবারও পাট চাষে আগ্রহী হয়েছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ২০০১ সালে জেলায় পাটের আবাদ হয়েছিল ২১ হাজার ৫৩২ হেক্টর জমিতে। দফায় দফায় দাম কমে যাওয়ায় চাষাবাদ কমে ২০০৭ সালে জেলায় পাট চাষ নেমে এসেছিল ৫ হাজার ৮৭ হেক্টর জমিতে। পরের বছর বেড়ে চাষ হয়েছিল ৫ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে। এরপর প্রতি বছর লাভের মাত্রা বাড়ায় ২০১৬ সালে ৮ হাজার ২৪২ হেক্টর  জমিতে পাট চাষ হয়। চলতি মৌসুমেও ৮ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, গত ১০ বছরের ব্যবধানে ময়মনসিংহ জেলায় পাটের আবাদ বেড়েছে ৩ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরসিরতা গ্রামের শাহীন মিয়া গত মৌসুমে ৫০ শতাংশ জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। তার  খরচ হয়েছিল ৬ হাজার টাকার মতো। খরচ বাদে লাভ হয়েছিল ১৯ হাজার টাকা। বাম্পার ফলন ও  ভাল দাম পাওয়ায় শাহীন এবার ৭০ শতাংশ জমিতে পাট চাষ করার কথা ভাবছেন।

পাট চাষের জন্য জমি তৈরি করছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরসিরতা গ্রামের শাহীন মিয়াতিনি জানান, এবার আগাম জাতের পাট চাষ করার জন্য আগাছা পরিষ্কার করে জমি প্রস্তুতের কাজ করছেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলেই চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি পাট বীজ বপন করবেন।

শাহীনের মতো ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর কুষ্টিয়া পাড়া গ্রামের চাষি সাইফুল ইসলাম গত মৌসুমে ৬৬ শতাংশ জমিতে তোষা পাট আবাদ করেছিলেন।  পাট আবাদে তার খরচ হয়েছিল ৭ হাজার টাকার মতো। খরচ বাদে লাভ হয়েছিল  ১৫ হাজার ৮শ’ টাকা।

সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, পাটের ভাল দাম পাওয়ায় চরাঞ্চলের অধিকাংশ চাষি এখন পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

চরগোবিন্দপুর গ্রামের চাষী আব্দুল মালেক জানান, চৈত্র মাসের মাঝামাঝিতে শুরু হয়ে বৈশাখ মাসজুড়ে পাট বীজ বপন করা হয়। তিন মাসের মাথায় পাট ঘরে ওঠে। দাম ভাল পাওয়ার পাশাপাশি পাটখড়ির চাহিদা থাকায় ধান চাষ কমিয়ে দিয়ে পাট চাষ করছেন চাষিরা।

ময়মনসিংহ সদরের অস্টধার বাজারের পাট ব্যবসায়ী রহিম তরফদার জানান,গত ৩/৪ বছর ধরে দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন চাষির বাড়ি থেকেই ব্যবসায়ীরা পাট সংগ্রহ করে থাকে। এখন আর চাষিদের পাট বেচার জন্য ধরনা দিতে হয় না দাবি করে তিনি জানান,সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিজিএমসির পাশাপাশি বেসরকারি পাটকল মালিকরাও প্রত্যন্ত এলাকায় ডিলারের মাধ্যমে পাট কিনছেন।

ময়মনসিংহ বিএডিসির বীজ বিপনন বিভাগের উপ-পরিচালক আইয়ুব উল্লাহ জানান, গত বছর তার দফতর থেকে সাড়ে ১৭ টন পাট বীজ বিক্রি হয়েছিল। চাহিদা বেড়ে এবার ২৫ টন ৮শ’ গ্রাম পাটবীজ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।    

ময়মনসিংহ কৃষি খামারবাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আলতাবুর রহমান জানান, দাম ও চাহিদা কমে সারা দেশের মতো ময়মনসিংহেও পাটের চাষ কমে আসে। চাষিরা ধান চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তবে কয়েক বছর ধরে পাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষ বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে কৃষি বিভাগ চাষিদের পরামর্শ দিয়ে আসছে বারবার একই জাতের ফসল না ফলিয়ে বহুমুখী ফসলের চাষ করার জন্য। এর ফলে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়, ফলন হয় ভাল।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পাটের সুদিন আসতে শুরু করেছে। সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং আইন করে তা বাস্তবায়নও করেছেন। পাটের নানামুখী ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়ায় একদিকে পাটের চাহিদা বেড়েছে, সেসঙ্গে বেড়েছে পাটের দাম।

/বিএল/

আরও পড়ুন:
লাভ কম হওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা