ভূমিহীন চুরখাই নামাপাড়া গ্রামের বসির উদ্দিন-আয়েশা দম্পতির ঠাঁই মিলেছিল ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত চুরখাই গুচ্ছগ্রামের ১৯ নম্বর ঘরে। হোটেল শ্রমিক বসির তিন ছেলে আর দুই মেয়ে নিয়ে এই বসতঘরে বাস করছিলেন। কয়েক দিন আগে আকস্মিক ঝড় আর বৃষ্টির কারণে বসতঘর ধসে পড়েছে পুকুরে। ঘরের মালামাল সরাতে পারলেও এখন বসির-আয়েশা দম্পতির থাকার কোনও জায়গা নেই। তারা আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশীর বারান্দায়।
বসির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার তাদের গুচ্ছগ্রামে ঘর দিয়েছেন। ২০১২ সালে প্রতিবেশী ইসরাফিল হোসেন ও মোজাম্মেল হোসেন দুই ভাই গুচ্ছগ্রাম ঘেঁষে গভীর পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করেন। পুকুর খননের সময় গুচ্ছগ্রামবাসী বাধা দিলেও সেই বাধাকে উপেক্ষা করে দুই ভাই প্রভাব খাটিয়ে মাছ চাষ করেন। এরপর থেকেই হুমকিতে পড়ে গুচ্ছগ্রাম। তখন গুচ্ছগ্রাম রক্ষায় জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদনও করা হয়েছিল। তবে তাদের পক্ষে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
বসির আরও জানান, সময় মতো প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে আজ তাদের বসতঘর হারাতে হতো না।
১৭ নম্বর ঘরের বাসিন্দা গোলাম মজনু, ১৮ নম্বরের শমলা বেগম, ২০ নম্বরের ইউনুস আলী, ২১ নম্বরের আবুল কালাম, ২২ নম্বরের নাজমা বেগম, ২৩ নম্বরের মনোয়ারা বেগম, ২৪ নম্বরের হোসনেয়ারারসহ ১০টি বসতঘরের অর্ধেক অংশ এখন পুকুরে চলে গেছে বলে তারা জানান।
তিনি আরও জানান, কয়েকটি ঘর ধসে পড়ার পর তারা বর্তমান ইউএনও মো. সেলিম আহমদের সঙ্গে দেখা করেছেন। ইউএনও তাদেরকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আশ্বাস জানিয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়েরের কথা বলেছেন। আবুল কালাম ও বসির উদ্দিন বাদী হয়ে ফিসারি মালিক মোজাম্মেল হোসেন ও ইসরাফিলের বিরুদ্ধে গত ১১ মে কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
পুকুরের কারণে গুচ্ছগ্রাম হুমকির মুখে এই কথা স্বীকার করে ফিসারি মালিক ইসরাফিল জানান, গুচ্ছগ্রাম হওয়ার আগেই তাদের পারিবারিক পুকুর ছিল। পরে পুকুর গভীর করে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ শুরু করা হয়। তবে সরকার যদি গুচ্ছগ্রাম রক্ষায় এগিয়ে আসে তবে তারাও সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সেলিম আহমদ জানান, গুচ্ছগ্রামবাসী তার কাছে আসার পর তিনি প্রকল্প কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছিলেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার জন্য। বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে গুচ্ছগ্রামবাসীকে সব ধরনের সহযোগিতা করার কথাও জানান তিনি।
/এনআই/এআর/