গ্রামবাসী জানায়, মালিঝি নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনেকবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু আজও এ নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়নি।
জানা গেছে, ১৯৮৬ সালে এ নদীর ওপর একটি স্লুইচ গেইট নির্মাণ করা হয়। স্লুইচ গেইটের পাশ দিয়ে নির্মাণ করা হয় সংযোগ সেতু। গ্রামের লোকজন ওই সংযোগ সেতুর ওপর দিয়ে প্রায় এক বছর পারাপার হলেও পরবর্তীতে পাহাড়ি ঢলে স্লুইচ গেইট ও সংযোগ সেতুটি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। পরে গ্রামবাসী ওই সংযোগ সেতুটির সঙ্গে কাঠ ও বাঁশের সংমিশ্রণে নির্মিত সাঁকোটি দিয়ে কোনওরকমে যাতায়াত ব্যবস্থা চালু রাখেন। দীর্ঘদিন ধরে সরকারিভাবে সাঁকোটির কোনও সংস্কার না হওয়ায় সেটিও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ কারণে মিরপাড়া, ধারারপাড়, হাতিবান্দা, চকপাড়া ও প্রধানপাড়া গ্রামের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ ওই ভাঙা ও নড়বড়ে সাঁকোর ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
এছাড়া এ সেতুর ওপর দিয়ে কৃষকদের কৃষিপণ্য, গবাদি পশু ও রিকশা, ভ্যান বা মোটরসাইকেল যাতায়াত করতে পারে না। যেকোনও সময় সাঁকোটি ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে এলাকার মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রেও উন্নয়ন হবে বলে তাদের অভিমত ।
হাতিবান্দা গ্রামের মুদি দোকানদার মো. নজরুল ইসলাম আক্ষেপ করে জানান, নির্বাচন এলে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা এ নদীর ওপর সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে থাকেন। কিন্তু নির্বাচনের পর কোনও জনপ্রতিনিধিরা তাদের আর খোঁজ-খবর নেন না। সাঁকোটির স্থলে একটি পাকা সেতু তৈরি করে দেওয়া হলে গ্রামবাসীর চলাচলে দুর্ভোগের অবসান হবে।
ওই গ্রামের রিকশাচালক আব্দুর রহিম জানান, এখানে সেতু না থাকায় রাতে তিনি বাড়িতে রিকশা নিয়ে যেতে পারেন না। রাতে রিকশা রাখার জন্য প্রতিমাসে তার ভাড়া দিতে হয় ৪০০ টাকা ।
হাতিবান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সেলিম মিয়া (১০) জানান, বর্ষা মৌসুম বা পাহাড়ি ঢলের সময় এ নদীটিতে প্রবল স্রোত থাকে। তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের সাঁকোটি পার হতে হয়।
হাতিবান্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নুরজাহান বেগম বলেন, প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে সাঁকোটি ভেঙে পড়ে। তখন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যায়।
হাতিবান্দা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন দোলা বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হওয়ার পরই গ্রামবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে সেতু নির্মাণের জন্য আবেদন জানিয়েছি। গ্রামবাসীর কষ্ট দূর করতে এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা দরকার।’
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক বলেন, ‘মালিঝি নদীর ওপর পাকা সেতু নির্মাণের একটি প্রকল্প প্রস্তাব এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে সেখানে সেতু নির্মাণ করা হবে।’
/এআর/