ঈশ্বরগঞ্জে বিধবাকে গণধর্ষণের ঘটনায় ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি

ময়মনসিংহ

বিধবাকে গণধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ঈশ্বরগঞ্জে ২ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বোরহান উদ্দিন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। শনিবার সকালে তাকে গ্রেফতার করে বিকেলে ময়মনসিংহ ১ নম্বর আমলি আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। রবিবার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে  নির্যাতিত ওই নারীর মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়েছে। রাজিবপুর ইউনিয়নের লাটিয়ামারি গ্রামে গত ৬ আগস্ট এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

গতকাল শুক্রবার মাসুদ মিয়া ওরফে জুয়েল, সজীব ওরফে আবু সাইদ, নাসির, বোরহান উদ্দিন, আজমল, আব্দুল মজিদ, কামাল হোসেন, রিপন মিয়া ও মোরশেদ মিয়াসহ ৯ জনকে আসামি করে মামলা করার পর শনিবার ভোর রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নির্যাতিত ওই নারীর বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়।

মামলার বিষয়টি স্বীকার করে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি বদরুল আলম খান জানান, নির্যাতিত নারী অভিযোগ দাখিলের পর এজাহারভুক্ত আসামি বোরহান উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান চলছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার নান্দাবাড়ি গ্রামের বিধবা ওই নারী (২৮) জর্ডানের একটি গার্মেন্টেসে কর্মরত ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় ফেসবুকের মাধ্যমে ঈশ্বরগঞ্জের ভাটির চর নওপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মাসুদ রানা ওরফে জুয়েলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জুয়েল তাকে বিয়ের কথা বলে গত মাসের ৬ তারিখে দেশে ফিরিয়ে আনে। পরে জুয়েল তার সহযোগী সজীব ওরফে আবু সাইদকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় ওই নারীর ভাইয়ের বাসায় গিয়ে দেখা করে এবং বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এরপর ওই নারী তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় চলে যায় এবং পরিবারের সঙ্গে কথা বলে। গত ৬ আগস্ট (রোববার) সন্ধ্যায় নির্যাতিত নারী তার বড় বোনকে সঙ্গে নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জে জুয়েলের সঙ্গে দেখা করতে আসে। সে দুই বোনকে নিজের বাড়িতে না নিয়ে কৌশলে রাজিবপুর ইউনিয়নের লাটিয়ামারি বেরিবাঁধের ওপরে নিয়ে যায়। পরে বড় বোনকে বেঁধে রেখে জুয়েলসহ ৯ জন ওই নারীকে রাতভর পটালাক্রমে ধর্ষণ করে। এসময় তাদের সঙ্গে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে কাউকে কিছু বললে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। সকালে দুই বোন স্থানীয় ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি আক্তারুজ্জামান শরাফতের বাড়িতে আশ্রয় নেয় এবং বিষয়টি তাকে জানায়। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম মোদাব্বিরুল ইসলাম আসেন এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেন। পরে নির্যাতিত ওই নারী ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা শেষে শুক্রবার তার চাচাকে সঙ্গে নিয়ে ৯ জনকে আসামি করে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মামলা করেন।

নির্যাতিত ওই নারীর চাচা শেখ রিয়াজ উদ্দিন ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। 

ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক দাবি করে স্থানীয় চেয়ারম্যান একেএম মোদাব্বিরুল ইসলাম দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়েছেন।

গ্রেফতারকৃত বোরহান উদ্দিন স্থানীয় ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতির বলে নিশ্চিত করেছেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুজ্জামান জুয়েল।

তিনি বলেন, ‘ধর্ষক যেই হোক, তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

ময়মনমসিংহ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি মাহমুদা ফেরদৌস আরা হেলেন বলেন, ‘ফেসবুকের মাধ্যমে সারাদেশেই নারীরা প্রতারিত হচ্ছে এবং ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। তিনি সংঘবদ্ধ ধর্ষক চক্রের শাস্তি দাবি করেন।’

/জেবি/

আরও পড়তে পারেন: টানা বৃষ্টিতে হিলি স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্থবির, পানিবন্দি ১৪ হাজার মানুষ