এক যুগ ধরে শিকলবন্দি নিরুপতি

পায়ে শিকল পরিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে নিরুপতিকে নিরুপতি কোচ (৩৭) প্রায় এক যুগ আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। যেন হারিয়ে না যান, এ জন্য তার মা পায়ে শিকল পরিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছেন তাকে। মায়ের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য নিরুপতির ভাগ্যে জোটেনি চিকিৎসাসেবা। ওই নারীর বাড়ি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের নওকুচি গ্রামে।

নিরুপতির বৃদ্ধা মা পাতিশ্বরী কোচ জানান, ২০ বছর আগে নওকুচি গ্রামের সতেন্দ্র কোচের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের বেশ কয়েক বছর পর মা হন নিরুপতি। এরপর সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। বাড়ির কাউকে কিছু না বলে এদিক সেদিক চলে যেত নিরুপতি। সে যেন কোথাও হারিয়ে না যায়, তাই পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয়। দিনের বেলায় গাছের সঙ্গে, আর রাতে চৌকির পায়ার সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে চলছে প্রায় এক যুগের শিকলবন্দি জীবন।

তিনি জানান, এক বছর হলো তার মেয়ে স্বামী হারা হয়েছে। ফলে এখন অভাব-অনটন, দুঃখ, দুর্দশা নিরুপতির নিত্যসঙ্গী। আর্থের অভাবে তার মেয়ের ভাগ্যে জোটেনি উপযুক্ত চিকিৎসাসেবা।

পাতিশ্বরী আরও জানান, তিনি নিজেও সহায়-সম্বলহীন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। তাদের বেশি আবাদি জমি নেই। যেটুকু আছে তাতে ফসল ফলানোর লোক নেই। অন্য কোনও সহায়-সম্বল নেই বললেই চলে। মেয়ের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াতে হয়। প্রায় দিনই একবেলা খাবার জুটলেও আরেক বেলা জোটে না।

ওই এলাকায় গিয়ে জানা যায়, মানবেতর জীবন যাপন করছে নিরুপতি কোচ ও তার পরিবারের সদস্যরা। বৃদ্ধা পাতিশ্বরী কোচের নামে যেকোনও ভাতার ব্যবস্থা করাসহ প্রতিবন্ধী নিরুপতি কোচের নামে ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য জোর দাবি এলাকাবসীর। এদিকে, মেয়ের জন্য একটি বিধবা ভাতা বা প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড পেতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন পাতিশ্বরী।

কাংশা ইউপির সদস্য আব্দুর রশিদ জনান, খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কাংশা ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, ‘মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার কারণে ওই নারীকে শিকলে বেঁধে রাখার বিষয়টি তার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে ইউনিয়ন পরষিদের তরফ থেকে সহায়তার পাশাপাশি বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আনা হবে।