রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান ভাষাসৈনিক আব্দুল আজিজ

‘ভাষা আন্দোলনের উনসত্তর বছরেও ভাষাসৈনিকদের একটি তালিকা করতে পারেনি কোনও সরকার। আজও ভাষা সৈনিকরা রাষ্ট্রীয় কোনও স্বীকৃতি পাননি। বর্তমান সরকার তো অনেক কিছুই করেছে, আমাদের মতো ভাষাসৈনিকদের স্বীকৃতির ব্যবস্থা করলে তৃপ্তি নিয়ে মরতে পারতাম।’ ভাষার মাসে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের ভাষাসৈনিক আব্দুল আজিজ তালুকদার (৮৭)।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘ভাষার মাস এলে বেসরকারি সংগঠনের পক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে ভাষাসৈনিক হিসেবে সম্মানিত করে, কিন্তু আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সম্মান জানানো হয়নি। ভাষা সৈনিকদের প্রতি এই অবহেলায় জীবিত ভাষাসৈনিকরা কষ্ট পান।’

নেত্রকোনার পূর্বধলার আব্দুল আজিজ তালুকদার ১৯৫২ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজের ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার্থী থাকা অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে যোগদান করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলি ও ছাত্র হত্যার খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে কিশোরগঞ্জেও আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন ছাত্র-শিক্ষক, শ্রমিক জনতা। মিছিল-স্লোগানে মুখরিত সেই আন্দোলনে কলেজছাত্রদের মধ্যে আব্দুল আজিজ ছিলেন অন্যতম। 

ভাষাসৈনিক আব্দুল আজিজ জানান, একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলা ও ছাত্র হত্যার খবর জানতে পেরে সহপাঠী আবু তাহের খান, হেলাল উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন মিলে আলোচনা করে পরের দিন মিছিল নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ২২ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একটানা কিশোরগঞ্জের অলিগলিতে চলে মিছিল-সমাবেশ। আন্দোলনের মুখে নুরুল আমিন সরকার বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হন। 

ভাষাসৈনিক আব্দুল আজিজের সংবর্ধনা ক্রেস্ট লেখাপড়া শেষে শিক্ষকতার চাকরি সূত্রে ১৯৮৩ সালে আব্দুল আজিজ তালুকদার চলে আসেন ময়মনসিংহ শহরে। এরপর থেকেই স্ত্রী রাজিয়া খাতুন, তিন পুত্র ও তিন কন্যাকে নিয়ে বসবাস করে আসছেন শহরের সানকিপাড়ার এসএ সরকার রোডে। এখন ভাষা সৈনিক আব্দুল আজিজ তালুকদারের সময় কাটে বই-পত্রিকা পড়ে এবং টেলিভিশন দেখে।

আব্দুল আজিজ তালুকদার জানান, দীর্ঘদিনেও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হয়নি। আদালতে, বিভিন্ন সরকারি দফতরে এখনও ইংরেজি ভাষায় কাজ চলছে। বাংলা ভাষাকে পুরোদমে চালু করার দাবি জানান তিনি।

এই ভাষাসৈনিকের পুত্রবধূ কলেজ শিক্ষিকা শামীমা আরা জানান, বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য যারা লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, তাদের সরকার যোগ্য সম্মান দেবেন, এটাই তারা চান। সরকার ভাষাসৈনিকদের তালিকা করলে নতুন প্রজন্ম তাদের বিষয়ে জানতে পারবে। তখন নতুন প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। 

ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চাঁন মিয়া জানান, ভাষাসৈনিকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া খুবই জরুরি। তাদের তালিকাভুক্ত করে রাষ্ট্রীয় সব জাতীয় দিবসে সম্মান জানানোর দাবি করেন তিনি।