পানির অপর নাম জীবন। তাই জীবন বাঁচাতে পানি পান করতেই হবে মানুষকে। কিন্তু, যেন তেন পানি পান করলে কী আর চলে। এজন্য দরকার নিরাপদ সুপেয় পানি। আর এই হাহাকারটাই বাজছে এখনও ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট-ধোবাউড়ার গারো পাহাড়ি জনপদে। এখানকার অন্তত ১০টি গ্রামে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দিন দিন তীব্র হয়ে উঠছে। পানির স্তর অনেক নীচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলের পানির অভাবে এখনও এই জনপদের মানুষ কুয়ো ও পুকুরের পানি খাবারসহ গৃহস্থালি প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ নিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উদ্যোগ না থাকায় হতাশ পাহাড়ি জনপদের মানুষ।
মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ হালুয়াঘাটের গারো পাহাড়ের গাবড়াখালি গ্রামে সালমা বেগমের বাড়ি। গত ৪৫ বছর ধরে তিনি সংসার সামলাচ্ছেন এখানে। স্বামী হজরত আলীর সঙ্গে তার এই জীবনে যতবার মনোমালিন্য হয়েছে তার বেশিরভাগই ঘটেছে বাড়ির টিউবওয়েলে পানি না ওঠায়। তিনি মিস্ত্রি ডেকে সারাই করতে বলেন। হজরত আলীও নানা কষ্টের ভেতরেও মিস্ত্রি ডাকেন। কিন্তু, চেষ্টা সত্ত্বেও তার টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। যে পানি ওঠে তা পান করা যায় না। ময়লা আর আয়রনসহ নানা সমস্যা সে পানিতে। কারণ, এখানে পানির স্তর নেমেছে অনেক নিচে। ৪৫ বছর আগে সংসার জীবনের শুরুতে তাদের টিউবওয়েরের ব্যবস্থা ছিল না, তখন পাশের বাড়ির কুয়োর পানি টেনে এনে খাবারসহ সংসারের গৃহস্থালি কাজ সারতেন। এখন এই বৃদ্ধ বয়সে এসেও তাকে আবারও সেই পানিই টানতে হচ্ছে পাশের বাড়ির কুয়ো থেকে। ঘরে টিউওেয়েল থাকলেও এখন আর সেটা কাজ করছে না।
শুধু গাবড়াখালির সালমা বেগমই নন, হালুয়াঘাটের ডুমনিকুড়া, ভুটিয়াপাড়া, ধোবাউড়া উপজেলার দিঘলবাগ, ঘিলাগড়া, গোবরচুনা, রানীপুর, কড়ইগড়াসহ মেঘালয়ের পাদদেশের প্রায় ১০টি পাহাড়ি জনপদের মানুষের একই সমস্যা। দেশ এগিয়ে গেছে কিন্তু, তাদের খাবার পানির সমস্যার সমাধান হয়নি আজও।
শামসুল আরও বলেন, এখানে পান করার মতো পানি অনেক নিচুতে। অল্প পাইপ ব্যবহার করে সাধারন টিউবওয়েল বসিয়ে পানি পাওয়া যায় না। দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে রিংওয়েল টিউবওয়েল বসাতে পারলে তবেই খাবার বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়। আমরা গরিব মানুষ, আমাদের কী আর অমন সামর্থ্য আছে?
ধোবাউড়া দক্ষিণ মাউজপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুল হক জানান, বিশুদ্ধ খাবার পানির সমস্যা দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা। খরা মৌসুমে এই সমস্যা তীব্র হয়ে উঠে। বর্ষা মৌসুমে টিউবওয়েলে কিছু পানি পাওয়া গেলেও পরে আর পানি ওঠে না। সারা বছর তাই কুয়োর পানিই মানুষের খাবার পানির একমাত্র ভরসা। কুয়োতে ধুলোবালি উড়ে এসে পড়ে। ফলে পানি পেলেও এই পানি সরাসরি পান করার জন্য নিরাপদ থাকে না। এজন্য সারাবছরই এখানে ডায়রিয়ার মতো রোগ ঘরে ঘরে লেগেই রয়েছে।
এসব এলাকার মানুষের খাবার পানির সমস্যা সমাধানে সরকারের বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়ার দাবি জানান দক্ষিণ মাউজপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুল হক।
জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সহায়তায় দ্রুতই পাহাড়ি জনপদের মানুষের খাবার পানি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।
এসব পাহাড়ি জনপদের মানুষের পানির সমস্যা সমাধানে দ্রুতই উদ্যোগ নেবেন সরকার এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।