কিছু সময়ের গরম বাতাসেই সব শেষ!

৩৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ২০ কাঠা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। জমি থেকে এক ছটাক ধান ঘরে তোলার আশা নেই। ঘরে খাবারও নেই। আত্মীয় বাড়ি থেকে ১০ কেজি চাল দিয়েছিলো আর মাত্র একদিন চলবে। দোকানে গিয়েছিলাম কিছু বাজার করতে দোকানদার বাকি দিতে রাজি হয়নি। সে বলেছে জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে, খেতে পাবে না, এখন তোমাকে বাকি দিলে পরে টাকা কোথা থেকে দিবা। চার মেয়ে দুই ছেলে আমার। ঘরে গিয়ে সন্তানের মুখের দিকে তাকালে কান্নায় বুক ফেটে যায়। তাদের কি খাওয়াবো? কি দিয়ে করবো তাদের ভরণ-পোষণ? আর কি দিয়েই করবো ঋণ পরিশোধ। এমনভাবেই আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন নেত্রকোনার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া।

শুধু আবুল মিয়াই না নেত্রকোনার মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরি উপজেলার হাওর পাড়ের প্রতিটি কৃষক পরিবারে এখন ফসল হারানোর হাহাকার। অনিশ্চিত আগামী দিনের শঙ্কা সবার মধ্যে।

“কৃষকের কান্নায় ভারী হয়েছে হাওরের আকাশ”

মঙ্গলবার সারাদিন জেলার বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে ফসলের মাঠে যেখানে একসময় ছিল ধানে ভরপুর, এখন সেখানে শুধু সাদা কাশফুলের মতো মরা ধান গাছ বাতাসে দোল খাচ্ছে।

কৃষকরা জানান, গত রবিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি শেষে দমকা গরম বাতাস শুরু হয়। এতে পাকা হতে শুরু করা ধান ঝরে যায়। দিন যত যাচ্ছে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে, ফসলের মাঠে ধান গাছ বিবর্ণ হয়ে উঠছে। সূর্যের প্রখরতা বাড়তে শুরু করায় উঠতি বোরো ফসলের ধানের শীষ মরতে শুরু করেছে। মাঠের পর মাঠ ধান গাছ বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে।

হাওরে ২৮ জাতের ধানসহ কাটা শুরু হয়েছে বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড ধান। বেশির ভাগ জমির ধানই পাকতে শুরু করেছিল। এ সময়ে হাওর পাড়ের কৃষক-কৃষাণিরা অনেকেই ব্যস্ত ছিল ধান তুলতে। তবে এখন তাদের মধ্যে শুধুই হাহাকার।

এদিকে ফসলের এমন ক্ষতির কারণ জানতে কৃষি বিভাগের একটি গবেষক দল মাঠে কাজ করছেন।

হাওরের বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি দেখতে সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরুসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জেলার বিভিন্ন উপজেলার কয়েকটি হাওর পরিদর্শন করেছেন। এ সময় মন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকার থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। কৃষকদের পাশে থাকবে সরকার। লকডাউনের পর ঢাকা গিয়ে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলবো বলেও কৃষকদের আশ্বাস দেন তিনি।

“কয়েক মিনিটের তাণ্ডবে হাজারো কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ”

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, অতি গরম আবহাওয়ায় এমনটা হয়েছে। ফুল আসা ধান সব চিটা হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে আছে, জরিপ শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে।

হঠাৎ গরম বাতাসে বোরো ফসল নষ্ট হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য কৃষি বিভাগের একটি গবেষণা ইউনিট মাঠে কাজ করছে বলে জানান তিনি।