ময়মনসিংহ হাসপাতালে করোনা রোগী রাখার জায়গা নেই

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটের কোনও ওয়ার্ডে শয্যা খালি নেই। হাসপাতালের সামনের ডিজিটাল ডিসপ্লেতে সার্বক্ষণিক প্রচার হচ্ছে শয্যা খালি না থাকার তথ্য। সাধারণ ওয়ার্ড ও আইসিইউতে শয্যার সংখ্যা বাড়িয়েও রোগীর চাপ সামাল দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে অক্সিজেন সংকট। যেকোনও সময় বন্ধ হতে পারে করোনা রোগী ভর্তি কার্যক্রম।

বৃহস্পতিবার (০৫ আগস্ট) বিকাল পর্যন্ত কোনও রোগীকে ফিরিয়ে না দিলেও যেকোনও সময় থেকে ফিরিয়ে দেওয়া শুরু হতে পারে। ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা না পেয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটনার আশঙ্কা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে অন্যত্র চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়ায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক নাজেহাল হয়েছেন বলে জানা গেছে।

হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ফোকাল পারসন ডা. মহিউদ্দিন খান বলেন, আটতলা ভবনের সাধারণ ওয়ার্ডে শয্যা খালি না থাকায় ইউনিটের প্রতিটি মেঝেতে, শয্যার ফাঁকে, বারান্দায়- যে যেখানে পারছেন বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত কয়েক দিনে রোগীর চাপ এতটাই বেড়েছে যে করোনা ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা নেই। বাড়তি রোগীর চাপে চিকিৎসক ও নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন। অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাও নাজুক হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন যে হারে রোগী ভর্তির জন্য ভিড় জমাচ্ছেন, তাতে যেকোনও সময় বিভাগীয় এই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

হাসপাতালের সামনের ডিজিটাল ডিসপ্লেতে সার্বক্ষণিক প্রচার হচ্ছে শয্যা খালি না থাকার তথ্য

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সংকট মোকাবিলায় ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ, বাংলাদেশ-সিবিএমসিবিতে করোনা রোগীর চিকিৎসা সেবা বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা নবনির্মিত তারাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সূর্যকান্ত সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। 

চিকিৎসক মহিউদ্দিন আরও বলেন, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০০ জন। এ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় ৬০০ রোগী। অথচ ২৫ শয্যার আইসিইউসহ হাসপাতালে সর্বোচ্চ ৫০০ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। বর্তমানে আইসিইউতে আছেন ২২ জন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলার বাইরে আশপাশের টাঙ্গাইল, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুর জেলা থেকেও উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার আশায় করোনা রোগীরা ময়মনসিংহ হাসপাতালে আসেন। প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও ভর্তি হচ্ছেন শতাধিক। এ অবস্থায় হাসপাতালের মেঝে, বারান্দা ও দুই শয্যার মাঝের ফাঁকা স্থানেও রোগীরা আশ্রয় নিয়েছেন। চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মতো পরিবেশ নেই। হাসপাতালের বাইরে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে থেকে আরও ১০ গুণ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা দিতে কমপক্ষে ১৫০ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। অথচ ৮০ জন চিকিৎসক রয়েছেন। এরমধ্য ১৫ জন চিকিৎসক মেটারনিটি সমস্যা ও ব্রেস্ট ফিডিংয়ের জন্য করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ফলে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আছেন ৬৫ জন চিকিৎসক। এ অবস্থায় নন-কোভিড হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসক এনে সেবা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে নন-কোভিড ও কোভিড রোগীদের সেবা কার্যত ব্যাহত হচ্ছে। রোগীর চাপ বাড়ার সঙ্গে চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সংকট সার্বিক চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থাকে বেসামাল করে তুলেছে।

সাধারণ ওয়ার্ড ও আইসিইউতে শয্যার সংখ্যা বাড়িয়েও রোগীর চাপ সামাল দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ-ছবি: বাংলা ট্রিবিউন

এদিকে, চলমান অক্সিজেন সংকটের সমাধান হয়নি। হাসপাতালে ১০ হাজার লিটার ধারণক্ষমতার সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা থেকে পাওয়া প্রায় তিন হাজার সিলিন্ডার দিয়ে করোনা রোগীদের চাহিদা সামাল দেওয়া হচ্ছে। রিফিল ও পরিবহনের সময় পথে যানজটের কবলে আটকা পড়ায় এসব সিলিন্ডার সময় মতো হাসপাতালে আসছে না। কঠোর বিধিনিষেধ উঠে গেলে সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লে এই সংকট তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন অবস্থায় হাসপাতালে ২০ হাজার লিটার ধারণক্ষমতার আলাদা দুটি সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট অবিলম্বে চালুর বিকল্প নেই বলে মনে করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলুল কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শয্যা খালি না থাকায় করোনা রোগীদের ভর্তিসহ সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রশাসন ও অধিদফতরকে জানানো হয়েছে। চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।