‘কোনোরকম চিড়া-মুড়ি খেয়ে বেঁচে আছি’

প্রায় ৬ দিন ধরে পানির মধ্যে বাচ্চা নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। হাঁস-মুরগি সব ভেসে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনও মেম্বার-চেয়ারম্যান খোঁজ-খবর নেননি। এক বেলা খেয়ে দুই বেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে।

শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কথাগুলো বলছিলেন জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী ইউনিয়নের খামারিপাড়া এলাকায় আশ্রিত মৃত আব্দুল রশিদের স্ত্রী রমিছে বেওয়া। তার কথা শেষ হতে না হতেই দুলেনী বেওয়া, রহিজ উদ্দিন ও আরজিয়া বলেন, ‘আমাদের আগে বাড়ি ছিল বেলগাছা ইউনিয়নে। যমুনা নদীতে সবকিছু চলে গেছে। এখানে গত দুই বছর ধরে নামমাত্র ঘর ভাড়া নিয়ে কোনোরকম আশ্রয় নিয়েছি।’

তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘ত্রাণের জন্য চিনাডুলীর চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি বলেন, তোমরা তো বেলগাছার ভোটার। আর বেলগাছার চেয়ারম্যানের কাছে গেলে বলে, তোমরাতো চিনাডুলির বাসিন্দা, ত্রাণ ওই চেয়ারম্যানই দেবে। বন্যার সময় আমরা কোনও সাহায্যই পাইনি। বন্যা হলেই আমাদের দুঃখ-কষ্ট নেমে আসে। কোনোরকম চিড়া-মুড়ি খেয়ে বেঁচে আছি।’

বন্যা হলেই তাদের জীবনে দুঃখ-কষ্ট নেমে আসে

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বেলগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক বলেন, বন্যার সময় কেউ যাতে না খেয়ে থাকে, সেকারণে সবার কাছে আমার মোবাইল ফোনের নম্বর দেওয়া আছে। ফোন করলেই তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে যাবে। তাছাড়া আমি না করবো কেন? তাদের কাছে তো ভোটার আইডি কার্ড রয়েছে। প্রতিনিয়তই বন্যার্ত এলাকায় খোঁজ-খবর রাখছেন বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে যমুনা নদীর পানি কিছুটা কমলেও জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেওয়াগনঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে চার সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ।

সরেজমিন ইসলামপুর উপজেলায় দেখা গেছে, বন্যায় উপজেলার বেলগাছা, কুলকান্দ, চিনাডুলী, সাবধরী, নোয়ারপাড়া ও পলবান্ধা ইউনিয়নের পানিবন্দি অন্তত ৮০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, বন্যার কবলে পড়েছে ২১ হাজার ৫০০ জন মানুষ। দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার, শিশু ও গো-খাদ্যেরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

জামালপুরের ইসলামপুরে পানিবন্দি ৮০ হাজার মানুষ

ইসলামপুর উপজেলা প্রকল্প ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু জানান, আগামী তিন দিনে বন্যার্ত এলাকায় ১২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এগুলো বিতরণ কার্যক্রম চলছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. সাখাওয়াৎ ইকরাম বলেন, বন্যার পানিতে জেলার তিন হাজার ৬২৩ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এছাড়া তিন হাজার ৫৩০ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান, ৪৮ হেক্টর জমির সবজি এবং ৪৫ হেক্টর রোপা আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পর্যাপ্ত খাবার মজুত রয়েছে জানিয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জানান, জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় ৯০ মেক্ট্রিক টন চাল, ১২ লাখ ৫০ হাজার নগদ টাকা ও এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।