X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাটে বসে থাকে ফেরি, যাত্রীদের পকেট কাটছে ট্রলার

সালেহ টিটু, বরিশাল
১০ মার্চ ২০২৪, ০৮:০১আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৪, ০৮:০১

বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ফেরিঘাট থেকে নগরীর বেলতলা খেয়াঘাটে ট্রলারে ১০ মিনিটের পথ। এই পথে যাত্রীদের আট টাকা ভাড়া। তবে রাত বাড়লে দ্বিগুণের বেশি নেওয়া হয়। অর্থাৎ ২০ টাকা করে গুনতে হয়। এখানে দরদামের সুযোগ নেই। ফেরি থাকলেও চলে না। ব্যবহার হয় ট্রলারে ওঠানামার ঘাট হিসেবে।

এভাবে প্রতিদিন চরমোনাই ইউনিয়নের ৯ গ্রামের বাসিন্দা, হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার যাত্রীদের জিম্মি করে ইচ্ছেমতো পকেট কাটছেন ট্রলারচালক ও ঘাটের ইজারাদার। বাড়তি ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে চালকদের বাগবিতণ্ডাও হয়। মোটরসাইকেল প্রতি ভাড়া দিতে হয় ২০ টাকা। তবে মোটরসাইকেলচালকের ভাড়া আলাদা। এছাড়া ভ্যান থেকে শুরু করে সাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনকে আলাদা ভাড়া দিতে হয়। এক্ষেত্রে ভাড়া দিতে হয় ওজন হিসাব করে। ইজারাদারের বেঁধে দেওয়া ভাড়াই দিতে বাধ্য থাকেন যাত্রীরা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঘাটের ইজারাদার বলেছেন, প্রায় দেড় কোটি টাকা দিয়ে ইজারা এনেছি। সে হিসেবে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হয়।

চরমোনাই ইউনিয়নের চরমোনাই এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‌‘কাজ করতে প্রতিদিন সকালে ট্রলারে করে নগরীতে যেতে হয়। কাজ শেষে রাতে বাড়িতে ফিরতে হয়। এতে সকালে যাওয়ার সময় আট এবং রাতে ২০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। মাঝেমধ্যে রাতের ভাড়া আরও বেশিও গুনতে হয়। ইচ্ছেমতো ভাড়া নেন ট্রলারচালকরা। কারও কাছে অভিযোগ দিলেও কোনও কাজ হয় না।’

ফেরি থাকলেও চলে না, ব্যবহার হয় ট্রলারে ওঠানামার ঘাট হিসেবে

চরমোনাই ইউনিয়নের বাসিন্দা রিয়াজ হাওলাদার ও স্থানীয় দোকানি মনির শিকদারসহ একাধিক যাত্রী জানিয়েছেন, চরমোনাই ইউনিয়নের ৯ গ্রামের বাসিন্দাদের প্রতিদিন জেলা শহর বরিশালে বিভিন্ন কাজে যেতে হয়। বিশেষ করে ছেলেমেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া থেকে শুরু করে চাকরি এবং শ্রমজীবী মানুষের ভরসাস্থল নগরী। সেখানেই যেতেই যত ভোগান্তি।

মনির শিকদার বলেন, বেশি সমস্যায় পড়তে হয় বর্ষা মৌসুমে। ফেরি আছে, তবে ঘাটে বসে থাকে। চলাচলে করে না। ট্রলারে ওঠার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ফেরি। অনেক সময় ঝোড়ো বাতাসে ট্রলার থেকে যাত্রী নদীতে পড়ে নিহত ও আহত হন। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো ফেরি থাকতেও তাতে যাতায়াত করতে পারি না। ফেরি চলাচল করলে বিপদের শঙ্কা কম থাকতো। কম সময়ের মধ্যে কীর্তনখোলা নদীর পাড়ি দেওয়া যেতো। এতে যাত্রীদের ভাড়াও কম দিতে হতো। কিন্তু ফেরি চলে ইজারাদারের ইশারায়। দিনের বেলায় ভিআইপি কেউ এলে ফেরি ছাড়া হয়। এছাড়া সবসময় ঘাটে বসে থাকে। এ সুযোগে আমাদের পকেট কাটে ট্রলার।

ট্রলারের একাধিক যাত্রী জানিয়েছেন, ২০০৮-১০ সালেও দুই টাকা ভাড়া দিতে হতো। এতে মোটেই সমস্যা হতো না। কিন্তু এখন বছরে ঘুরলেই ভাড়া বাড়ছে। এখন দিনে আট টাকা আর রাতে ২০ টাকা দিতে হয়।

কেন ফেরি চলে না, তা জানতে শনিবার সকালে এই প্রতিবেদক ঘাটে বসে থাকা ফেরিতে ওঠার পর একজন স্টাফকেও পাননি। পাশে থাকা লোকজনের কাছে স্টাফদের খোঁজ জানতে চাইলে বলেন, যারা ট্রলারের ভাড়া তুলছে তাদের কাছে জানতে যান, তারাই বলতে পারবে। ট্রলারের চালকদের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমরা জানি না। এ অবস্থায় ঘাটের আশপাশে দীর্ঘ সময় তাদের খুঁজেও পাওয়া যায়নি।

ফেরি চলাচলের সময় ঠিক নেই উল্লেখ করে ঘাটের ইজারাদারের স্টাফ বশির মাঝি বলেন, ‘যাত্রী ও যানবাহন পাওয়া যায় না। এজন্য ফেরি চলে না। অনেক সময় তেলের টাকাও ওঠে না। তাই ছাড়ার সময় ঠিক নেই।’

নগরীর বেলতলা এবং চরমোনাই ঘাট থেকে আধা ঘণ্টা ও এক ঘণ্টা পরপর দুটি করে ট্রলার ছেড়ে আসে। প্রতিটি ট্রলারে সাত-আটটি মোটরসাইকেল তোলা হয়। এছাড়া অর্ধশতাধিক যাত্রীকে গাদাগাদি করে বসানো হয়। অনেকে দাঁড়িয়ে থাকেন। ট্রলারে ওঠার আগেই খেয়াঘাটে যাত্রীদের ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।

এই ঘাটের সাবেক ইজারাদার মোকলেসুর রহমান বলেন, ‘২০০৮ সালে ইজারা ছিল ১১ লাখ টাকা। ২০২২ সালে সেটি ৮৫ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে সেই ইজারার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৪০ লাখ টাকায়। এ কারণে যাত্রীদের বেশি ভাড়া গুনতে হয়। এখানে ইজারাদারের দোষ নেই।’

রাত বাড়লে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া নেওয়া হয়

কেন ফেরি চলে না জানতে চাইলে ঘাটের ইজারাদার হীরা মাতুব্বর বলেন, ‘তা আমার জানা নেই। আমরা ট্রলারের জন্য ঘাটের ইজারা নিয়েছি। ট্রলারে ২৪ ঘণ্টা কর্মচারী রাখতে হয়। ট্রলার এবং দুই ঘাটে প্রতিদিন ২০ জন লোক কাজ করে। তাদের বেতন থেকে শুরু করে ট্রলার মেরামত এবং ডিজেলে বড় অংকের টাকা খরচ হয়। যাত্রীদের ভাড়া জেলা পরিষদ থেকে নির্ধারিত। রাতে যাত্রী কম থাকায় ভাড়া কিছুটা বাড়িয়ে নেওয়া হয়।’

এ ব্যাপারে চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (চরমোনাই পীরের ছোট ভাই) জিয়াউল করিম বলেন, ‘ফেরিঘাটের উভয় প্রান্ত থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার যাত্রী পারাপার হন। চরমোনাই ইউনিয়নবাসী ছাড়াও হিজলা এবং মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার বড় একটি অংশের যাত্রীরা ট্রলারে যাতায়াত করছেন। এখানে ফেরি দেওয়া হলেও তা চলাচল করছে না। এর ফলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় চরমোনাই মাহফিলের সময়। ওই সময় বিপুল সংখ্যক লোককে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এজন্য ট্রলার ঘাটের ইজারা বাতিল করার জন্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আবেদন করেও কোনও লাভ হয়নি। প্রতি বছর ইজারা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী ভাড়াও বাড়ে। এই থেকে যাত্রীদের মুক্তি দিতে ট্রলারের ইজারা বাতিল করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। ট্রলারের ইজারা বাতিল হলে এমনিতেই ফেরি চলবে।’

ফেরি বন্ধ রেখে ট্রলার চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কেএম জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, ‘ট্রলার ঘাটের ইজারা দিয়েছে জেলা পরিষদ। তবে কত টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে, তা জানা নেই। ট্রলার ঘাট নিয়ে অনেক সমস্যা রয়েছে। যাত্রীদের নানা অভিযোগ আছে। এসব বিষয়ে দ্রুত একটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
গরমে নাকাল পথচারীদের জন্য পানির ব্যবস্থা করলো ফায়ার সার্ভিস
আড়াই শতাধিক মানুষের তৃষ্ণা মেটালেন জবি শিক্ষার্থীরা
ভ্যাপসা গরমে জীবন চরমে ঢাবির গণরুমের শিক্ষার্থীদের
সর্বশেষ খবর
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
ঘামে ভেজা চুলের যত্নে কী করবেন
ঘামে ভেজা চুলের যত্নে কী করবেন
ইউক্রেনের তিনটি অঞ্চলের জ্বালানি স্থাপনায় রুশ হামলা
ইউক্রেনের তিনটি অঞ্চলের জ্বালানি স্থাপনায় রুশ হামলা
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে সুসংহত করতে হবে: ধর্মমন্ত্রী
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে সুসংহত করতে হবে: ধর্মমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই