‘পুরোনো বন্ধু কাউকে পাচ্ছি না’

‘স্কুলে যাবো এই আনন্দে সারারাত ঘুমাতে পারিনি। কিছুক্ষণ পর পর ঘুম থেকে জেগে মায়ের কাছে জানতে চেয়েছি স্কুলের সময় হয়েছে কিনা। কখন সকাল হবে, কখন স্কুলে যাবো এই চিন্তায় অস্থির ছিলাম। এ জন্য আগেভাগেই স্কুলে চলে এসেছি। এখানে সবাইকে দেখে অনেক খুশি হয়েছি। এই আনন্দ প্রথমদিন স্কুলে আসার আনন্দের মতো।’

বিদ্যালয়ে আসার আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলেছে ময়মনসিংহের সরকারি বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রায় মোহন্ত। সে মহানগরীর স্টেশন রোডের বাসিন্দা সূর্য মোহন্ত ও মুক্তা মোহন্ত দম্পতির মেয়ে।

রায় মোহন্ত জানায়, ‘গত বছর তৃতীয় শ্রেণিতে দুই থেকে আড়াই মাস ক্লাস করার পর করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। বার্ষিক পরীক্ষা না দিয়েই চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছি। ক্লাসের বন্ধুরা সবাই নতুন। পুরোনো বন্ধু কাউকে পাচ্ছি না। বাসা থেকে এসেছিলাম বন্ধুদের দেখা মিলবে। কিন্তু এসে দেখি কাউকে চিনতে পারছি না। তাই ক্লাসে এসে একটু ভয় লাগছে, মাকে ছাড়তে ইচ্ছা করছে না। মা চলে যেতে চাওয়ায় কান্না করেছি।’

মুক্তা মোহন্ত জানান, ‘স্কুল খোলার ঘোষণার পর থেকেই অস্থির হয়ে যায় মেয়ে। স্কুলে কখন আসবে এই চিন্তায় কাল সারারাত ঘুমায়নি। যে আনন্দ আর উচ্ছ্বাস নিয়ে এসেছিল, স্কুলে আসার পর তার মানসিক অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেছে। নতুন ক্লাস, নতুন সহপাঠী। এ কারণে ভয় পাচ্ছে। শ্রেণিকক্ষ থেকে আমাকে ছাড়তে চাচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘রায়ের জন্মের পর থেকে নার্ভের সমস্যার কারণে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে বেড়ে ওঠা। শরীর খুব দুর্বল। এক বছরের ব্যবধানে দুটি নিউরো সার্জারি করতে হয়েছে। এসব কারণে আমাকে বন্ধু মনে করে। বিশেষ করে গত দেড় বছর তো বাসায় বন্দি জীবন কাটিয়েছে। এই সময়টা আমাকে তার খেলার সাথী হিসেবে পেয়েছে। তবে এখন স্কুল খোলার পর ধীরে ধীরে ভয় দূর হয়ে যাবে তার।’