দীর্ঘদিনেও সংস্কার ও মেরামত না হওয়ায় ময়মনসিংহের পুরোনো রেললাইনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। লাইনের বেহাল দশার কারণে প্রায়ই ইঞ্জিন ও বগি লাইনচ্যুত হয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া ২০০ বছর আগে স্থাপিত ময়মনসিংহের রেললাইন পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নতুন কেনা রেল ইঞ্জিন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে দ্রুতগতি ও উন্নত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।
স্থানীয়রা জানান, ময়মনসিংহের রেললাইনগুলোতে নেই পর্যাপ্ত পাথর। পুরোনো কাঠের স্লিপার ভেঙে-চুড়ে গেছে ও লাইনের কাঠের স্লিপারের সঙ্গে লাগানো হুক-বোল্ট ও ডগ স্পাইকও চুরি হয়ে গেছে। একই অবস্থা ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর রেল ব্রিজটির। ফলে যাত্রীরা বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই ট্রেনে চলাচল করছেন।
জানা যায়, প্রায় দুইশ’ বছর আগে ময়মনসিংহ ও আশপাশের ২৫০ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপিত হয়। তবে এর বেশিরভাগই এখন বেহাল দশায় রয়েছে। নিয়মিত সংস্কার, পুরনো সরিয়ে নতুন লাইন প্রতিস্থাপন না হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন সাধারণ যাত্রীরা।
এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ রেললাইন দিয়ে নতুন কেনা রেল ইঞ্জিন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নড়বড়ে এবং বেহালদশার লাইনের কারণে ময়মনসিংহের রেল রুটে সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আনা লোকোমোটিভ ইঞ্জিনের একটিও চালানো সম্ভব হয়নি। ২০০ হর্স পাওয়ারের অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন লোকোমোটিভ ইঞ্জিন অনেক বড় এবং ওজন বেশি হওয়ায় পুরনো লাইনে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, ময়মনসিংহের বিভ্ন্নি রুটের লাইনের এক্সেল লোড (ভারবহন ক্ষমতা) ১০-১১। কিন্তু নতুন ইঞ্জিনগুলোর এক্সেল লোড ১৫। বর্তমানে এসব ইঞ্জিন শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গ রুটে চালানো সম্ভব।
একই অবস্থা ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত ব্রিটিশ আমলের রেল ব্রিজটির। স্থানীয় ব্রিজ সংলগ্ন বসবাসরত বাসিন্দা গৃহবধূ সাম্মি আক্তার বলেন, ব্রিজের ওপর রেললাইনের স্লিপারগুলো পচে ও ভেঙে গেছে। এছাড়া হুক বোল্ট ও ডকস্পাইক চুরি হয়ে যাওয়ায় হেলেদুলে ট্রেন চলার সময় মনে হয় ব্রিজ ভেঙে যেকোনও সময় ট্রেন নদীতে পড়ে যাবে।
উল্লেখ্য, ময়মনসিংহ থেকে প্রতিদিন সাতটি আন্তঃনগরসহ ২৮টি ট্রেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন রুটে যাতায়াত করছে। এসব ট্রেনে দ্রুতগতির ইঞ্জিন ও উন্নত বগি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না রেললাইনের বেহাল দশার জন্য। এ অবস্থায় রেললাইনের সংস্কার ও উন্নয়নের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।