সড়ক না খাল? 

‘খানাখন্দ আর ভাঙাচোরা সড়কে পানি জমে থাকায় মনে হয় যেন গ্রামের খাল দিয়ে চলাচল করছি। সড়কে পানি জমে থাকায় কোনও গর্ত বোঝা যায় না। এসব গর্তে প্রতিদিনই যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনায় মানুষ আহত হচ্ছে। সড়কে পানির কারণে পায়ে হেঁটে যাওয়ারও উপায় নেই। অসুস্থ ও নারী-শিশুদের জন্য এই পথে চলাই দায়।’ এভাবেই বেহাল সড়কের ভোগান্তির কথা বলছিলেন ময়মনসিংহের ভালুকার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রামের ভ্যানচালক সুরুজ আলী। 

সুরুজ আলী বলেন, ভালুকার সিডস্টোর থেকে পশ্চিম দিকে পাড়াগাঁও গতিয়ারবাজার, কাচিনা, বাটাজোড় হয়ে ২৩ কিলোমিটার সড়কটি মিশেছে টাঙ্গাইলের সখিপুরে। কিন্তু সড়কের বেশির ভাগ জায়গা বর্ষার পানিতে ভেঙে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। সড়কের বাজার এলাকায় খানাখন্দে পানি জমে ছোট ছোট ডোবার মতো অবস্থা হয়েছে। এই সড়কে যাতায়াত করতে প্রতিদিন যানবাহনের চালক ও পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ভ্যান-রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা গর্তে পড়ে প্রায়ই যাত্রীরা আহত হন। দুর্ঘটনায় অনেকের হাত-পাও ভেঙেছে।

বেহাল সড়কের যেন কোনও অভিভাবক নেই উল্লেখ করে কাচিনা এলাকার বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, গত পাঁচ বছরে এই সড়কে কোনও সংস্কার কিংবা মেরামতের কাজ হয়নি। সড়কের দুইপাশে রানার কোম্পানির কারখানাসহ অসংখ্য কারখানা আছে। কিন্তু এই সড়কের উন্নয়নে জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারের যেন কোনও মাথাব্যথা নেই। 

স্থানীয়দের ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, সড়কের অবস্থা বেহাল হওয়ায় জরুরি রোগী ঢাকা কিংবা ময়মনসিংহ মেডিক্যালে নেওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসা করাতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে রয়েছেন স্থানীয়রা।  

গতিয়ারবাজারের ব্যবসায়ী মনসুর আলী জানান, সড়কটি খালের মতো অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল আনা সম্ভব হয় না। সড়কের খানাখন্দের কারণে যানবাহনে মালামাল আনতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়। সময় মতো দোকানের মালামাল আনা সম্ভব না হওয়ায় লোকসানের মুখে রয়েছি। পরিবহন খরচ বেশি পড়ার কারণে মালের দাম বেশি চাইলে ক্রেতারাও ঝগড়া করেন। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা খুব ক্ষতির মুখে রয়েছেন বলে জানান তিনি। 

বাটাজোড় এলাকার কৃষক জমশেদ আলী বলেন, বর্ষার পানি জমে সড়কটি ভেঙে ও গর্ত হয়ে এখন মরণ ফাঁদে রূপ নিয়েছে। মানুষ ঝুঁকি নিয়ে যানবাহনে যাতায়াত করে। কৃষিপণ্য নিয়ে যাওয়া অনেক কষ্টের বিষয়। সময়মতো কৃষিপণ্য বাজারে নিতে না পারায় ন্যায্য দাম থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। আগামী বর্ষার আগে সড়কের সংস্কার ও মেরামতের মাধ্যমে স্থানীয়দের ভোগান্তি লাঘবের দাবি জানান তিনি।  

সড়কের বেহালদশায় মানুষর দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহিদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সড়ক সংস্কার ও মেরামতের জন্য বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। আগামী বর্ষার আগেই সড়কের উন্নয়ন করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।