হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে ২৫ বছর পর ফিরে পেলেন বাবা-মা

হারিয়ে যাওয়ার ২৫ বছর পর ফেসবুকের কল্যাণে আকলিমা ওরফে আঁখি নুরকে (৩১) খুঁজে পেয়েছেন বাবা-মা। এত বছর পর মেয়েকে খুঁজে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের মানিক মিয়া ও সমরজান দম্পতি।

গত শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) উপজেলার লংগাইর ইউনিয়নের মাইজবাড়ি গ্রামে আকলিমা ফিরে আসেন। ছয় বছর বয়সে আকলিমা রাজধানীর গুলিস্তান মোড়ের একটি পানের দোকানের সামনে থেকে হারিয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পায়নি পরিবার। এতদিন পর ফিরে আসায় আকলিমাকে দেখতে বাড়িতে ভিড় জমান এলাকাবাসী।

স্বজনরা জানান, মানিক মিয়া ও সমরজান দম্পতির দুই ছেলে দুই মেয়ে। জীবিকার তাগিদে ১৯৯৬ সালে মানিক মিয়া সপরিবারে ঢাকায় গিয়েছিলেন। এরপর সেখানেই বসবাস শুরু করেন। একদিন তার ছয় বছরের মেয়ে আকলিমাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হন। গুলিস্তান মোড়ে একটি পানের দোকানের সামনে মেয়েকে দাঁড় করিয়ে পাশের দোকানে যান বাবা। মেয়েকে রেখে যাওয়ার পর তিনি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। এতে ফিরতে দেরি হয়। একঘণ্টা পর এসে দেখেন মেয়ে পান দোকানের সামনে নেই।

অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আকলিমার সন্ধান পাননি বাবা। মেয়ের সন্ধান চেয়ে রাজধানীতে মাইকিং, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ও থানায় জিডি করেন। এরপর পার হয়ে যায় ২৫ বছর। ধরে নিয়েছিলেন আকলিমা আর ফিরবে না। সম্প্রতি ‘আপন ঠিকানা’ শিরোনামে আরজে কিবরিয়ার এক রেডিও অনুষ্ঠানে আকলিমার সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে। পরে এটি ফেসবুকে শেয়ার হলে সেই সূত্রে মেয়ের সন্ধান পান মানিক মিয়া।

আকলিমা ওরফে আঁখি নুরআকলিমা জানান, সেদিন বাবার জন্য অপেক্ষা করে না পেয়ে অনেক কান্নাকাটি করে একটি বাসে উঠে যাই। আমাকে কাঁদতে দেখে এক লোক বাসায় নিয়ে যান। পরে আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে আসেন। এরপর থেকে আকলিমার নাম পরিবর্তন করে আঁখি নুর নামে শুরু হয় নতুন জীবন। আশ্রয়কেন্দ্রে বড় হয়েছি। সেখান থেকে বের হয়ে বিউটি পারলারে কাজ শুরু করি। একসময় মোবাইল ফোনে আশুলিয়ার মাসুম মোল্লার সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে বিয়ে হয়। স্বামীর সঙ্গে সেখানেই বসবাস করছিলাম। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। মোবাইলে ফোনে এফএম রেডিওতে আরজে কিবরিয়ার ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মানুষের হারিয়ে যাওয়ার গল্প শুনতাম। একসময় মনে হলো, আমার হারিয়ে যাওয়ার গল্পটা যদি বলতে পারতাম। হয়তো শুনে আমার মা-বাবা খোঁজ পাবেন। তাই ওই অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকার চেয়ে আবেদন করি। বহুদিন অপেক্ষা করে ডাক পাই। পরে সেখানে আমার সাক্ষাৎকার প্রচার করা হলে তা ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। সেই সূত্র ধরে আমার পরিবার খোঁজ পায়। দীর্ঘদিন পর মা-বাবা ও পরিবারকে কাছে পেয়ে কান্না ধরে রাখতে পারিনি। বাবা-মা ও পরিবারকে কাছে পাওয়ার আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না।

এদিকে, আকলিমাকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা বাবা-মা ও স্বজনরা। 

আকলিমার বাবা মানিক মিয়া বলেন, ‘এভাবে মেয়েকে খুঁজে পাবো কল্পনাও করিনি। মেয়ে হারানো যে কত কষ্টের, তা বাবা-মা বোঝেন। বহু দিনের বুকের কষ্ট দূর হলো।’

সমরজান বলেন, ‘আকলিমার স্মৃতি আজও ভুলতে পারিনি। ভাবতাম আকলিমাকে কখনও খুঁজে পাবো না। মাঝে মধ্যে মনে হতো দেশটা অনেক ছোট, একদিন না একদিন ঠিকই আকলিমা আমাদের মাঝে ফিরে আসবে। এই আশায় ছিলাম। আশা পূরণ হলো।’ 

আকলিমার খুশি দেখে স্বামী মাসুম মোল্লা আবেগাপ্লুত হয়েছেন। বলেন, ‘আমি সবকিছু জেনেই আকলিমাকে বিয়ে করেছিলাম। বিয়ের পর তার পরিবারের সন্ধান পেতে দুই জনে অনেক চেষ্টা করেছি। আল্লাহর রহমত থাকায় চেষ্টা সার্থক হয়েছে।’