সময়মতো হাসপাতালে আসেন না চিকিৎসকরা, ফিরে যান রোগী

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা সময়মতো হাসপাতালে আসেন না। টিকিট কেটে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে রোগীদের বাড়ি ফিরতে হয়। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা একাধিকবার চিকিৎসকদের সতর্ক করলেও কেউ গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুপুরের আগে কোনও চিকিৎসক হাসপাতালে আসেন না। অথচ সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চেম্বারে রোগী দেখার কথা চিকিৎসকদের। 

গত বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের বহির্বিভাগের গাইনি চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে অপেক্ষা করছিলেন শারমিন আক্তার (৩১)। তিনি নান্দাইলের আচারগাঁও গ্রামের মো. ওবায়দুল্লাহর স্ত্রী।

শারমিন বলেন, আমি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পেটব্যথার কারণে দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালে এসে টিকিট কাটি। এরপর গাইনি চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দুপুর ২টার দিকে গাইনি চিকিৎসক শামসুন্নাহার চেম্বার বন্ধ করে চলে যান। তখনও আমরা পাঁচ নারী রোগী লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। তাকে অনুরোধ করেছিলাম, আমাদের দেখে যান। কালকে আসেন বলে আমাদের না দেখেই চলে গেছেন শামসুন্নাহার।

শারমিন আরও বলেন, পরদিন বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আগের দিনের কাটা টিকিট নিয়ে সকাল সাড়ে ৮টায় হাসপাতালে যাই। দেড় ঘণ্টা শামসুন্নাহারের চেম্বারের সামনে অপেক্ষা করেছি। দুপুরে চিকিৎসক চেম্বারে এসেছেন। এর আগে প্রথম সন্তানের মা হয়েছিলাম। হাসপাতালে এসে কোনোদিন সময়মতো চিকিৎসকের দেখা পাইনি। 

রোগী ও স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়

শুধু শারমিন নন, একই অভিযোগ করেছেন অধিকাংশ রোগী ও স্বজন। কৃষক কাসেম আলী বলেন, সকাল ৮টা থেকে হাসপাতালে এসে বসে আছি। কিন্তু চিকিৎসকের দেখা নেই। সকাল সকাল ডাক্তার দেখাতে পারলে বাড়ি গিয়ে কৃষিকাজ করতে পারতাম। 

চন্ডীপাশা এলাকার গৃহবধূ কমলা আক্তার বলেন, সকাল ৮টায় কোনোদিন হাসপাতালে এসে চিকিৎসকের দেখা পাইনি। বেশির ভাগ চিকিৎসক সকাল ১০টা কিংবা দুপুরে চেম্বারে আসেন। এ কারণে রোগীর ভিড় বেশি। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হয় আমাদের।

এদিকে, রোগী ও স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। রোগীর স্বজন কামাল বলেন, ডায়রিয়ার কারণে আমার মাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। হাসপাতাল থেকে স্যালাইন দিলেও বেশিরভাগ ওষুধ বাইর থেকে কিনতে হয়েছে।

আরেক রোগীর স্বজন মেহেদী হাসান জানান, তার রোগী তিন দিন ধরে ভর্তি। কিছু কিছু ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হলেও অধিকাংশ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে সব ওষুধ পাওয়া গেলে ভালো হতো।

জানা গেছে, করোনাকালীন সময়ে হাসপাতালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ বাবদ এক লাখ ২৯ হাজার টাকা, আসবাবপত্র কেনা বাবদ এক লাখ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজের জন্য এক লাখ ও ভেষজ বাগান পরিচর্যার জন্য ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল।

হাসপাতালে কর্মরত এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, করোনাকালীন সময়ে সরকারি বরাদ্দের টাকা কিছু খরচ করে বাকিটা কোথায় গেছে কিছুই জানেন না। করোনাকালীন তারা প্রশিক্ষণ পাননি। তবে টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।

টিকিট কেটে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে রোগীদের বাড়ি ফিরতে হয়

তিনি আরও বলেন, কয়েকটা চেয়ার কিনে আসবাবপত্রের বরাদ্দ শেষ করে ফেলা হয়েছে। তবে ভেষজ বাগান পরিচর্যায় এক টাকা ব্যয় করা হয়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী শফিকুল ইসলাম বলেন, ৪৪ জন চিকিৎসকের পদের বিপরীতে আছেন ১০ জন। এ ছাড়া ২৯ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের বিপরীতে আছেন ২৭ জন, তৃতীয় শ্রেণির পদে ছয় জনের বিপরীতে আছেন চার জন, এমএলএসএস, ওয়ার্ডবয়, আয়া ও নৈশপ্রহরীর ১৪ পদের বিপরীতে কেউ নেই। 

চিকিৎসকরা সময়মতো হাসপাতালে না আসার কথা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুমুদর রহমান বলেন, চিকিৎসকদের বারবার সতর্ক করার পরও সময়মতো হাসপাতালে আসেন না। তাদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে। করোনাকালীন সময়ে সরকারি বরাদ্দের অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় করে ভাউচার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভেষজ বাগান পরিচর্যা না করে বরাদ্দের অর্থে আয়ুর্বেদিক ওষুধ কেনা হয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চিকিৎসকরা কেন সময়মতো হাসপাতালে যান না এ বিষয়ে জানতে শোকজ করা হবে। এ ছাড়া ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।