ইটভাটার ধোঁয়ায় নষ্ট বোরো ধান, লোকসানে চাষিরা

ময়মনসিংহ সদরের আকুয়া মড়লপাড়ার কৃষক আব্দুল মোতালেব ১৬ কাঠা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। জমি প্রস্তুত, চারা, সার, রোপণ ও মাড়াইয়ে শ্রমিক বাবদ খরচ পড়েছে প্রায় ৩২ হাজার টাকা। ক্ষেতের পাশেই বেশ কয়েকটি ইটভাটা। এগুলোর ধুলাবালি ও কালো ধোঁয়ায় ধান গাছ মরে যাচ্ছে। 

পাঁচ কাঠা জমির ধান মাড়াই করেছেন মোতালেব। প্রতি কাঠায় ফলন হয়েছে দেড় মণ করে। প্রতি মণ ধানের বাজারদর ৮০০ টাকা। পাঁচ কাঠা জমির সাড়ে সাত মণ ধান বিক্রি করেছেন ছয় হাজার টাকায়। প্রতি কাঠা জমিতে বোরো আবাদে দুই হাজার টাকা খরচ। ধান বিক্রি করে পেয়েছেন ১২০০ টাকা। প্রতি কাঠায় তার লোকসান ৮০০ টাকা করে।

আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘ইটভাটার ধুলাবালি ও কালো ধোঁয়ায় কৃষকদের জমির বোরো ধান মরে যাচ্ছে। এতে লোকসান গুণতে হচ্ছে। গত বছরও বোরো আবাদ করে লোকসানের মধ্যে পড়েছিলেন।’

শুধু কৃষক আব্দুল মোতালেব না, ময়মনসিংহ জেলার ইটভাটার আশপাশের অধিকাংশ জমির বোরো ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 

বোরো আবাদ করে লোকসানে কৃষকরা, উঠছে না খরচ

ভাড়েরা এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, ‌‘অনেক আশা করে বোরো আবাদ করেছিলাম। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় ধান গাছ মরে যাচ্ছে। সব চিটায় পরিণত হচ্ছে। আগামীতে সংসার খরচ কেমনে চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

ময়মনসিংহ কৃষি খামারবাড়ির তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে দুই লাখ ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় ভালো হয়েছে ফলন। তবে ইটভাটার কারণে কী পরিমাণ ফসল নষ্ট হয়েছে, এই তথ্য কৃষি অফিসে নেই।

জেলা কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মতিউজ্জামান জানান, ইটভাটার ধুলাবালি ও কালো ধোঁয়ায় বোরো আবাদের ফসল কিছুটা নষ্ট হয়েছে। কিন্তু কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সেই তথ্য জানা নেই।

ময়মনসিংহ জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মিহির লাল সরদার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, জেলায় দুই হাজার ২৯৭টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদফতর থেকে ছাড়পত্র নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে ৫৫টি। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে ইটভাটার কারণে বোরো আবাদের ফসলের কোনও ক্ষতি হচ্ছে কিনা, বিষয়টি জানা নেই।