‘ত্রাণ নয়, একটা বেড়িবাঁধ চাই’

‘তিল তিল করে গড়ে তোলা খামারটি চোখের সামনে পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেলো। এতে আমার প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে আমি ক্ষতিপূরণ চাই না, কোনও ত্রাণ চাই না, আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও এই মহারশি নদীতে একটা স্থায়ী বেড়িবাঁধ চাই। বেড়িবাঁধ না হলে স্থায়ী এই সমস্যার সমাধান কোনও দিনও হবে না। সরকারের কাছে অনুরোধ করি, আমাদের এই নদীর দুই পাড়ে বেড়িবাঁধ করে দেন।’ 

কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ব্রিজপাড় এলাকার বেনিয়ামিন। গত ১৬ জুন রাতে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মহারশি নদীর রামেরকুড়া এলাকার তীর ভেঙে যায়। এতে তার বসতভিটা ও চারটি মুরগির খামার ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। খামারে বিভিন্ন জাতের মুরগি ও ডিম ছিল। এছাড়া তার ঘর ও আসবাবপত্র ভেসে গেছে।

রামেরকুড়া এলাকার লোকমান আলী বলেন, ‘এবারের দুই দফায় বন্যায় আমার শেষ সম্বল ঘরটাও নিয়ে গেছে সর্বনাশা মহারশি। এই নদী প্রতি বছরই ভাঙে। কোনও টেকসই বাঁধ না থাকায় দুই পাড় ভেঙে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এই ক্ষতি থেকে বাঁচতে নদীর তীরে স্থায়ী বাঁধের বিকল্প নেই।’

মহারশি নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো প্রতি বছর প্লাবিত হয়

এবারের বন্যায় ভয়াবহ ভাঙনের কবলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের রামেরকুড়া গ্রাম। এই গ্রামের সাত স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। ব্রিজপাড় সংলগ্ন এই অংশে ভাঙনের ফলে ঝিনাইগাতী সদর বাজার রক্ষা পেলেও ধ্বংসযজ্ঞ চলে রামেরকুড়া গ্রামে। ১৭ জুন দুপুরে রামেরকুড়া বাঁধের সঙ্গে চার বাড়ি ও দুটি মুরগির খামার ভেসে গেছে। সেই সঙ্গে ওই গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ির মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রতি বছরই মহারশি নদীর পানির তোড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এর স্থায়ী সমাধান না হলে জানমালের ক্ষতি হতেই থাকবে। দ্রুত একটি বেড়িবাঁধ দেওয়া না হলে ভবিষ্যতেও অনেক বড় ক্ষতি হবে।

ঝিনাইগাতী ক্ষুদ্র বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, ‌‘মহারশি নদীর ভাঙনের ফলে প্রতি বছর বর্ষাকালে ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ, সরকারি দফতর ও সদর বাজার হুমকির মুখে পড়ে। পাড় ভেঙে পুরো ঝিনাইগাতী তলিয়ে যায়। বাজার ভেসে যায়, ব্যবসায়ীদের ভয়াবহ ক্ষতি হয়। তাই মহারশি নদীর তীরবর্তী বেড়িবাঁধ খুবই প্রয়োজন।’

ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহিদুল হক মনির বলেন, ‘এই বাঁধটি ঝিনাইগাতীবাসীর প্রাণের দাবি। মহারশি নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো প্রতি বছর প্লাবিত হয়। এই তীর ভেঙেই পুরো ঝিনাইগাতীতে পানি প্রবেশ করে। এখানে একটি স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ জরুরি।’

শেরপুর জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, ‘ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কথা হয়েছে। আমি একটি চিঠিও পাঠিয়েছি। আশা করছি এ বছরই এর স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব হবে।’