জামালপুরে ডুবে গেছে ১২০০ হেক্টর জমির ফসল

হঠাৎ যমুনা নদীর পানি বেড়ে জামালপুরের পাঁচ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ১২০০ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। এতে পাঁচ উপজেলার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, যমুনার পানি কয়েকদিন ধরে বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ১২০০ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে। এর মধ্যে আমন ধান ৭২১ হেক্টর, মরিচ ১৪৩ হেক্টর, পেঁয়াজ ২১ হেক্টর, ভুট্টা ১৭৫ হেক্টর, মাশকলাই ৭৭ হেক্টর, শাক-সবজি ৫৬ হেক্টর ডুবে গেছে।

জেলার সদর উপজেলা, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী উপজেলায় নদীর পানি বাড়ায় ওসব নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। সরেজমিনে মেলান্দহ উপজেলার কয়েকেটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আমন ধান, মরিচ, ভুট্টা, পেঁয়াজ, মাশকলাই ও বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে আছে। অনেক কৃষক ক্ষেতে যেন পানি না ঢুকতে পারে সেজন্য ক্ষেতের চারপাশে আইল তৈরি করে মাটি দিয়ে উঁচু করে দিচ্ছেন। এ পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে উঁচু জমিও তলিয়ে যাবে।

ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের শেখসাদি এলাকার শিল্পি আক্তার বলেন, ২৫ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড মরিচ চাষ করেছিলাম। এখন পানির নিচে। অকালে এ কেমন পানি কৃষকদের সর্বনাশ করতে আসছে। ফসল নষ্ট হলে আমাদের সব শেষ হয়ে যাবে।

মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের কান্দারপাড়া এলাকার কৃষক বছির আহমেদ বলেন, আমার ৬৫ বছর বয়সে এমন অসময়ে নদীর পানি বাড়তে দেখিনি। কয়েকদিন থেকে পানি বাড়ছে। পানি বাড়ায় ৭৫ শতাংশ ক্ষেতের ধান তলিয়ে গেছে। অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো। আরেক ধান না আসা পর্যন্ত কীভাবে চলবো। না খেয়ে থাকতে হবে।

কান্দারপাড়া এলাকার কৃষক আব্দুর সামাদ আকন্দ বলেন, কয়েকদিনে ধরে হঠাৎ পানি বেড়ে ধানক্ষেত তলিয়ে গেছে। প্রতিদিনই অল্প অল্প করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ এলাকার প্রায় সবাই ধান ও মরিচ লাগিয়েছিল। আমার এক বিঘা আমন ধান ও মরিচ ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

টোপকারচর এলাকার কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, মরিচ ও পেয়াঁজের ক্ষেতে পানি ঢুকলে ফসল আর থাকে না। পানি ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে মরিচ গাছ মরতে শুরু করে। পেঁয়াজ গাছ পচতে থাকে। সব ক্ষেত এখন পানির নিচে। পানি নেমে গেলেও ফসল টিকবে না।

ঘোষের পাড়া এলাকার নুরজাহান বেগম বলেন, আমার ধান ও মরিচ ক্ষেত মিলে সাড়ে তিন বিঘা জমি তলিয়ে গেছে। ধান আর মরিচ থেকে যে উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চলে। পানি নেমে গেলেও ওই ক্ষেতে কোনও ফসল করার উপায় নেই।

জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানা বলেন, শরৎকালে এভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১২০০ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি নেমে গেলে ক্ষয়-ক্ষতির সঠিত পরিমাণ বলা যাবে।