ভোগান্তির আরেক নাম পাটগুদাম ব্রিজ মোড়

ভোগান্তির আরেক নাম ময়মনসিংহ শহরের পাটগুদাম ব্রহ্মপুত্র ব্রিজ মোড়। এখানে যানজটে আটকা পড়ে প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হন বাসযাত্রী, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসা রোগী ও স্থানীয়রা।

নগরীর বাসিন্দারা বলছেন, পাটগুদাম ব্রহ্মপুত্র ব্রিজ মোড়ে আন্তজেলা বাস টার্মিনাল। এর আশপাশে অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে সিএনজি অটোরিকশা স্টেশন। বাস টার্মিনাল ও সিএনজি অটোরিকশা স্টেশনে এলোমেলো অবস্থায় রাখা হয় যানবাহন। ফলে অন্য কোনও যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। এজন্য নগরী থেকে এই দুটি স্টেশন অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হালুয়াঘাট, ভৈরব, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন রুটের যানবাহন পাটগুদাম ব্রহ্মপুত্র ব্রিজ হয়ে রাজধানী এবং উত্তর-দক্ষিণবঙ্গে যাতায়াত করে। নেত্রকোনা থেকে বালুবাহী ও হালুয়াঘাট থেকে কয়লাবাহী শত শত ট্রাকও এই পথে চলাচল করে। ফলে বিকল্প সড়ক না থাকায় প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়েন নানা শ্রেণিপেশার মানুষজন। ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে চলে যাচ্ছে দুই-তিন ঘণ্টা। 

যানজটে আটকা পড়ে প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হন নগরবাসী

স্থানীয় সূত্র জানায়, পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ে আন্তজেলা বাস টার্মিনাল, এর পাশে ট্রাক টার্মিনাল ও সিএনজি অটোরিকশা স্টেশন। দূরপাল্লার বাসগুলো মোড়ের প্রধান সড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করে। এজন্য সবসময় যানজট লেগেই থাকছে। সড়ক বিভাগের জায়গায় গড়ে উঠা বাস টার্মিনাল সিটি করপোরেশন পরিচালনা করলেও প্রধান সড়কের ওপর সিএনজি স্টেশন গড়ে উঠেছে অনুমোদন ছাড়াই। তারাও যত্রতত্র যাত্রী তুলছে। ফলে পাটগুদাম ব্রিজ মোড় থেকে চায়না মোড় ও শম্ভূগঞ্জ বাজার পর্যন্ত প্রায় ছয়-সাত কিলোমিটার দীর্ঘ হচ্ছে যানজট। দুই দিকের যানবাহন যানজটে আটকা পড়লে নগরবাসী ও যাত্রীদের ঘণ্টার ঘণ্টা ভোগান্তি পোহাতে হয়। 

এ সময় দূরপাল্লার যাত্রীদের কষ্টের শেষ থাকে না। যানজটে আটকা পড়ে সময়মতো গন্তব্যে যেতে পারেন না কেউ। সবচেয়ে ভোগান্তির শিকার হন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনরা। বিশেষ করে প্রসূতিদের ভোগান্তি অবর্ণনীয়। এছাড়া প্রতি ঈদের আগে-পরে ভোগান্তি বাড়ে অসহনীয়। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যানজট নিরসনে ময়মনসিংহ সড়ক বিভাগ কয়েক দফায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রিজের পাশের জায়গা সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে কাজ করেছে। পরে সম্প্রসারিত জায়গায় গড়ে উঠেছে অনুমোদনহীন সিএনজি অটোরিকশা, মাহিন্দ্র ও পিকআপ স্টেশন। ফলে সড়ক সম্প্রসারণের সুফল পাননি নগরবাসী। দীর্ঘদিন যানজট নিরসনে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায় মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। এ নিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় বিষয়টি তুলে ধরে একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট এএইচএম খালেকুজ্জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বহুদিন ধরে বাস টার্মিনালটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথা শুনছি। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। টার্মিনালের পাশেই সিএনজি অটোরিকশা স্টেশন। জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত সময়ের মধ্যে দুটি স্টেশন নগর থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

বিকল্প সড়ক না থাকায় প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়েন নানা শ্রেণিপেশার মানুষজন

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, ‌‘পাটগুদাম ব্রহ্মপুত্র ব্রিজ মোড়ে যানজটের কারণে মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। মোড়ের বাস টার্মিনালটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে কাজ করছে সিটি করপোরেশন। বাস টার্মিনালটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে একটি প্রস্তাবনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবনায় বাস টার্মিনালটি নগর থেকে সরিয়ে চরকালিবাড়ি এলাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। টার্মিনালের জন্য সাত একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাব পাস ও প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলে টার্মিনালটি সরিয়ে নেওয়া হবে।’

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মাছুম আহমেদ ভূঞা বলেন, ‘আধুনিক কোনও নগরীর ভেতর এরকম বাস টার্মিনাল থাকতে পারে না। পাটগুদাম বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক ভয়াবহ যানজট থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে এটি সরিয়ে নেওয়া ছাড়া বিকল্প পথ নেই।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘সিটি মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’