৭ বছর পর দেশে ফিরে বিয়ে, দেড় মাসের মাথায় সড়কে গেলো প্রাণ

‘স্বপ্ন ছিল তাকে নিয়ে জীবনের দীর্ঘপথ পাড়ি দেবো। কিন্তু বিয়ের দেড় মাসের মাথায় এভাবে আমাকে ছেড়ে পরপারে চলে যাবে ভাবিনি। তাকে ছাড়া বাকি জীবন কীভাবে কাটাবো? আমার কী সর্বনাশ হয়ে গেলো, আমার সব শেষ হয়ে গেলো!’ 

আহাজারি করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় ট্রাকচাপায় নিহত সোহাগ মন্ডলের (৩৫) স্ত্রী মিষ্টি আক্তার। ফুলপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের মোড়ল বাড়ির ছেলে সিঙ্গাপুর প্রবাসী সোহাগ। দেড় মাস আগে হালুয়াঘাট উপজেলার মুন্সীরহাটের মেয়ে মিষ্টি আক্তারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের মাত্র কয়েকদিন পরই স্বামীকে হারিয়ে কান্না থামছেই না মিষ্টির।

আরও পড়ুন: ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে প্রাণ গেলো ২ জনের

বিকালে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘সিএনজিচালিত অটোরিকশায় দুই জন বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। ময়মনসিংহ গিয়ে কলেজের কাজ সেরে মার্কেট করে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। তাকে নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হলো না।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অটোরিকশাটি যাত্রী নিয়ে ময়মনসিংহের দিকে যাচ্ছিল। এতে ছিলেন সোহাগ ও তার স্ত্রী মিষ্টি। দুপুর ১২টার দিকে শেরপুর-ময়মনসিংহ সড়কের গোপালপুর খামার বাজার এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশাচালকসহ তিন জন গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অটোরিকশা চালকসহ দুই জনের মৃত্যু হয়।

সোহাগের চাচাতো ভাই সাগর জানান, সাত বছর পর সিঙ্গাপুর থেকে বাড়ি আসেন সোহাগ। মাত্র দেড় মাস আগে মিষ্টির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মিষ্টি ময়মনসিংহের মমিনুন্নেসা কলেজে অনার্সে লেখাপড়া করছেন। সোহাগের এমন মৃত্যুতে পরিবারসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সোহাগের মৃত্যুতে স্ত্রী মিষ্টি এবং বাবা-মা শোক সইতে পারছেন না। বার বার তারা মূর্ছা যাচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, বিকালে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়েছে। বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। 

তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।