ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনা

‘যাচ্ছিলাম মেয়ের জন্য পিঠা নিয়ে, ফিরছি স্ত্রী-বোনের লাশ নিয়ে’

যাচ্ছিলাম মেয়ের বাসায় পিঠা নিয়ে। এখন স্ত্রী আর বোনের লাশ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে।’ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৭ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডের মেঝেতে শুয়ে বসে কথাগুলো বলছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রেজিয়া বেগমের স্বামী তোতা মিয়া। একই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তার বোন দুলেনা বেগম।

তার পাশে বসে মায়ের জন্য আহাজারি করছিলেন তাদের মেয়ে শিখা আক্তার। আহাজারি করে তিনি বলছিলেন, ‘মায়ের হাতের পিঠা আর খাওয়া হলো না। শেষ কথাটা হলো না। মা আর ফুপু এভাবে চলে যাবে ভাবতে পারিনি।’

শিখা বলেন, ‘বাড়ি থেকে আমার বাসায় আসবে বলে কয়েকদিন ধরে মা চাল ভাঙিয়ে পিঠা বানানোর প্রস্তুতি নেয়। ফুপুরে সঙ্গে নিয়ে কয়েক ধরনের পিঠা বানিয়েছিল আমার বাসায় আনার জন্য। মা-ফুপুর হাতের পিঠা আর খাওয়া হলো না।’

শিখা বলেন, ‘আমি আর আমার স্বামী গার্মেন্টসে কাজ করি। ঢাকার শাহাদাতপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। আমার ছেলে ইয়াসিন মা-বাবার সঙ্গে থাকে। ইয়াসিনকে সঙ্গে নিয়ে বাবা-মা ও ফুপুসহ আরও বেশ কয়েকজন মিলে একটি মাইক্রোবাসে করে রবিবার রাত ১০টার দিকে রওনা দেন। রাত ২টার দিকে খবর পাই মাইক্রোবাসটি খাদে পড়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে মা-ফুপু মারা গেছেন। এ সময় আমার ছেলে ও বাবা আহত হয়।’

রেজিয়ার স্বামী তোতা মিয়া বলেন, ‘মেয়ের বাসা ঢাকায় যাওয়ার জন্য আমার স্ত্রী রেজিয়া, ছোট বোন দুলেনা বেগম ও নাতি ইয়াসিনকে সঙ্গে নিয়ে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার মুন্সিরহাট থেকে মাইক্রোবাসে করে রওনা হই রাত ১০টার দিকে। ত্রিশাল পার হওয়ার পর রাত ২টার দিকে একটি যাত্রাবাহী বাস মাইক্রোবাসটিকে ওভারটেক করতে যায়। এ সময় মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এরপর সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আমার স্ত্রী, ছোট বোন দুলেনাসহ চার জন মারা যায়। আমরা অনেকেই আগুনে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই।’

উল্লেখ্য, রবিবার রাত ২টার দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালের রাঙ্গামাটি এলাকায় ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাস খাদে পড়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের দুই নারীসহ চারজন নিহত হয়। এ সময় আহত হযন আরও সাতজন।