ময়মনসিংহের ১৩টি ফায়ার স্টেশনের চিত্র

সরঞ্জাম সংকট দীর্ঘদিনের, বড় সমস্যা পানির অভাব

ময়মনসিংহ জেলায় ১৩টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশনে জনবল কমবেশি থাকলেও আধুনিক সরঞ্জামের সংকট দীর্ঘদিনের। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা পানির। আগুন নিয়ন্ত্রণে গিয়ে প্রায় সময় পানির সংকটে পড়তে হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। এতে আগুন নিয়ন্ত্রণে লেগে যায় বেশি সময়। বেড়ে যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।

জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন আছে ১৩টি। এর মধ্যে সদর স্টেশনে ২২ পদের বিপরীতে ২১, মুক্তাগাছা স্টেশনে ১৬ পদে ১৬, ভালুকা স্টেশনে ২৩ পদের বিপরীতে ২২, গফরগাঁও স্টেশনে ১৬ পদে ১৬, ঈশ্বরগঞ্জ স্টেশনে ১৬ পদে ১৬, ফুলবাড়িয়া স্টেশনে ১০ পদে ১০, ফুলপুর স্টেশনে ১৬ পদে ১৬, হালুয়াঘাট স্টেশনে ১০ পদে ১০, ত্রিশাল স্টেশনে ১৬ পদের বিপরীতে ১৩, নান্দাইল স্টেশনে ১৬ পদের বিপরীতে ১৩, ধোবাউড়া স্টেশনে ১৬ পদে ১৬, গৌরীপুর স্টেশনে ১৬ পদের বিপরীতে ১৪ ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ফায়ার স্টেশনে ২২ পদের বিপরীতে ২১ জন কর্মরত আছেন।

ফায়ার সার্ভিসের সদর স্টেশনের স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘জেলায় ১৩টি ফায়ার স্টেশনে ৩১৫ কর্মী রয়েছেন। তারা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।’ 

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের চাকরিতে প্রবেশের শুরুতে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় উল্লেখ করে আতিকুর রহমান বলেন, ‘এ ছাড়া বছরের বিভিন্ন সময়ে তাদের নানামুখী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এজন্য কাজ করতে গিয়ে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় না।’

অগ্নি-দুর্ঘটনা রোধে প্রত্যেকটি বহুতল ভবনে একটি করে ফায়ার স্টেশন থাকার কথা জানালেন জেলা ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাসুদ রানা। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের শর্ত মেনে বহুতল ভবন নির্মাণ করলে এবং ফায়ার সেফটি মানলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে নেভাতে সমস্যায় পড়তে হতো না। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের শর্ত মেনে ভবন নির্মাণ করছেন না নগরের বেশিরভাগ বহুতল ভবনের মালিকরা। এ বিষয়ে ভবন মালিকদের সচেতন হতে হবে।’

আগুন নিয়ন্ত্রণে গিয়ে প্রায় সময় পানির সংকটে পড়তে হয় উল্লেখ করে মাসুদ রানা বলেন, ‘পানির সংকট সবচেয়ে বড় সমস্যা। কোথাও বড় পুকুর কিংবা জলাশয় নেই বললেই চলে। আগুন নেভাতে গিয়ে গাড়ির পানি শেষ হয়ে গেলে আর পানি পাওয়া যায় না। তখন দূর থেকে পানি আনতে সময় বেশি লাগে। শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়।’

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ২৪ ঘণ্টায় প্রস্তুত থাকেন জানিয়ে সহকারী পরিচালক মাসুদ রানা আরও বলেন, ‘যেখানে ঘটনা ঘটে সেখানেই দ্রুত ছুটে যান কর্মীরা। বিশেষ করে ফায়ার বেল বাজার সঙ্গে সঙ্গে যে যেই অবস্থায় আছেন, সে অবস্থায় গাড়িতে উঠে ঘটনাস্থলে চলে যান। আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে, তবে তা কম।’

২০২২ সালে জেলায় ৫২৮টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানালেন বিভাগীয় ফায়ার স্টেশনের উপপরিচালক মতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, ‘এসব অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। প্রত্যেকটি ফায়ার স্টেশনে পানিবাহী গাড়ি, পাম্প টানা গাড়ি, রেসকিউ গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স আছে। এ ছাড়া ড্রাইভিং অ্যাপারেটাস, এয়ার কম্প্রেসার মেশিন, রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার ফাইটিং ইউনিট, হেভি ডিউটি লাইট ইউনিট, টোয়িং ভেহিক্যাল, পোর্টেবল পাম্প, বিদ্রিং অ্যাপারেটাস ও স্মোক ইজেক্টরসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আছে।’

তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে গিয়ে ফায়ার কর্মীদের পানির সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানিয়েছেন মতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে গাড়িতে নিয়ে যাওয়া পানি শেষ হয়ে গেলে আশপাশের পুকুর বা জলাশয়ে পানি পেতে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। আবার অনেক রাস্তাঘাট সরু হওয়ায় গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারি না আমরা। সেইসঙ্গে মানুষের অসহযোগিতা তো আছেই।’ 

মতিয়ার রহমান আরও বলেন, ‘জেলার সব স্টেশনে প্রশিক্ষিত ফায়ার ফাইটার রয়েছেন। যারা ইতোমধ্যে বড় দুর্ঘটনা এবং অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করেছেন। সরঞ্জামও আছে, তবে আরও বাড়ানো প্রয়োজন।’