গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সময় মতো হাসপাতালে আসেন না চিকিৎসক, রোগীর ভোগান্তি

“কোলের বাচ্চা আইরিনের প্রচণ্ড জ্বর, ঠাণ্ডা সর্দি আর বমির সমস্যা। হাসপাতালে আসছি সকাল পৌনে আটটায়। ২ ঘণ্টা পার হয়ে ১০টা বাজতে চলছে, এখনও ডাক্তার চেম্বারে আসেন নাই। জ্বরে বাচ্চা কাতরাইতাছে। বিনা চিকিৎসায় আমার মেয়ে যদি এখন মারা যায়, দায়ভার কে নিবে?”

ময়মনসিংহের গফরগাঁও ৫০ শয্যা হাসপাতালের আউটডোরে শনিবার (১৮ মার্চ) সকাল দশটার সময় বাচ্চাকে কোলে নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলছিলেন উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলামের স্ত্রী হেনা আক্তার (৩২)। আঠারো মাসের অসুস্থ কন্যা আইরিন আক্তারকে ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে এসেছিলেন জন্য তিনি। আউটডোরের টিকিট (নম্বর ১৮৪৯২/১৩৪) কেটে প্রায় দুই ঘণ্টার ধরে অসহায় চোখে ডাক্তারের অপেক্ষা করছিলেন। একরাশ হতাশা নিয়ে এই প্রতিবেদকের কাছে আক্ষেপ ও ক্ষোভের কথাগুলো বলছিলেন হেনা আক্তার।মায়ের কোলে হাসপাতালে আগত শিশু রোগী

একই অভিযোগ করেন হাসপাতালে আগত বেশ কয়েকজন রোগী ও তার স্বজনরা।

গফরগাঁও উপজেলার লামকাইন গ্রাম থেকে আট বছরের সন্তান মাদ্রাসা ছাত্র আবুল হাসানকে চর্মরোগের ডাক্তার দেখানোর জন্য হাসপাতালে এসেছেন হাসিনা আক্তার। টিকিট কেটে ২ ঘণ্টার উপরে ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। তিনি জানান, বর্তমান সরকার দেশের অনেক উন্নয়ন করেছে, কিন্তু গফরগাঁও হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান একটুও বাড়েনি। আগে যা ছিল এখনও তাই। চিকিৎসক-কর্মচারীরা ইচ্ছামতো তাদের দায়িত্ব পালন করে। এদিকে একটু সরকার নজর দিলে এই অঞ্চলের গরিব-অসহায় মানুষেরা একটু চিকিৎসা পেতো বলে জানান তিনি।

উপজেলার চরআলগী থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে এসেছেন কৃষক কামাল উদ্দিন। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি জানান, চিকিৎসক কর্মচারীরা সময়মতো আসেন না। ওষুধ দেওয়ার ফার্মেসিটাও সকালে খুলে না। এই অঞ্চলের রোগী ও তাদের স্বজনদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়ার দাবি করেন তিনি।

শনিবার (১৮ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে দশটা পর্যন্ত সরজমিনে গফরগাঁও হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান করে চেম্বারে কোনও ডাক্তারের দেখা পাননি এ প্রতিবেদক। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সকাল আটটা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত আউটডোরে চেম্বারে চিকিৎসকদের রোগী দেখার কথা। আউটডোরের টিকিট কেটে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছিল দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা। এসময়ে চিকিৎসক না পেয়ে কয়েকজনকে ফিরে যেতেও দেখা গেছে।

উপস্থিত রোগীদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের আলাপকালে সকাল দশটার দিকে আউটডোরের চেম্বারে ছুটে আসেন কার্ডিওলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মো. জিল্লুর রহমান। তিনি জানান, সকালে ডাক্তারদের অনেক কাজ থাকে। এইজন্য আউটডোরের চেম্বারে আসতে দেরি হয়। তবে সমস্যা থাকায় কয়েকজন ডাক্তার কিছুটা দেরিতে আসেন বলে স্বীকার করেছেন তিনি।received_1144902679540234

৫০ শয্যার গফরগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কনসালটেন্ট দশ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন পাঁচ জন, মেডিক্যাল অফিসার ১০ পদের বিপরীতে আট জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স ৩২ পদের বিপরীতে ২৭ জন, তৃতীয় শ্রেণীর ঊনত্রিশ পদের বিপরীতে ২২ জন, চতুর্থ শ্রেণি ২৬ পদের বিপরীতে ১৬ জন কর্মরত আছেন। 
এ ব্যাপারে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন খান জানান, যেসব ডাক্তার সময় মতো হাসপাতালে আসেন নাই তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ দেওয়া হবে। উত্তর সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম জানান, চিকিৎসকসহ যারা সময় মতো কর্মস্থলে আসবে না এবং কাজে গাফিলতি করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের এমপি ও গফরগাঁও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গরিব-অসহায় মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য কর্মরত চিকিৎসক ও কর্মচারীদের তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হবে জানান তিনি।