অপরিকল্পিত মাছ চাষে কমছে আবাদি জমি

ময়মনসিংহে অপরিকল্পিতভাবে মাছ চাষের কারণে কমে যাচ্ছে ফসলি আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ। লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা মাছ চাষে ঝুঁকছে।

সদরের গোপালনগর গ্রামের কৃষক আব্দুল করিম। ছয় একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করে আসছিলেন। মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় নিজস্ব ছয় একরসহ আরও চার একর জমি লিজ নিয়ে মোট ১০ একর জমিতে মাছ চাষ করতে পুকুর তৈরি করেছেন। তার মোট পুকুরের সংখ্যা ১১টি। গেলো সাত বছর ধরে তিনি মাছ চাষ করে আসছেন। ফসলি জমি না থাকায় ধান কিনে সারা বছর সংসার চালিয়ে আসছেন তিনি।

আব্দুল করিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি কৃষি ফসলের ওপর আমাদের পরিবার নির্ভরশীল। বাপ-দাদারাও কৃষিকাজ করে আসছে। তবে কৃষি আবাদ করে অতিরিক্ত মুনাফা পাওয়া যায় না। অল্পসময়ে লাভজনক কৃষি আবাদ বাদ দিয়ে ওই জমিতে পুকুর তৈরি করে মাছ চাষ শুরু করেছি। মাছ চাষ করে বছরে খরচ বাদে প্রায় ১০ লাখ টাকা মুনাফা থাকে। কিন্তু কৃষি আবাদ করে এই পরিমাণ লাভের মুখ কখনোই দেখা যায়নি। লাভজনক হওয়ায় নিজস্ব ছয় একর জমির সঙ্গে আরও চার একর জমি লিজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছি। দিন দিন মাছচাষির সংখ্যা বেড়েই চলেছে।’

একই এলাকার কৃষক হুসাইন আহমেদ বলেন, ‘পরিবারের কয়েক ভাই মিলে সাত একর জমিতে চারটি পুকুরে মাছ চাষ করছি। কৃষি ফসলি আবাদের চেয়ে মাছ চাষে লাভ বেশি। তবে নিজস্ব আরও কিছু জমিতে আমরা ধানসহ বিভিন্ন ফসল করে থাকি।’

শুধু আব্দুল করিম কিংবা হুসাইন আহমেদ না, জেলার বেশিরভাগ কৃষক এখন কৃষি আবাদ ছেড়ে পুকুর তৈরি করে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। অপরিকল্পিতভাবে মাছ চাষের কারণে ফসলি জমি দিন দিন কমে আসছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ১০ বছর আগে যেখানে কৃষি আবাদি জমির পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৫৬ হাজার ৩৪৬ হেক্টর। বর্তমানে সেই জমির পরিমাণ কমে ফসলি জমি তিন লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। ১০ বছরের ব্যবধানে ফসলি জমির পরিমাণ কমেছে ২৬ হাজার ৩৪৬ হেক্টর।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ির উপপরিচালক মতিউজ্জামান জানান, মাছ চাষের কারণে কৃষি জমির পরিমাণ কমলেও উন্নত জাতের বীজ উদ্ভাবনের কারণে উৎপাদনের পরিমাণ কমেনি। তবে অপরিকল্পিতভাবে মাছ চাষের কারণে কৃষি আবাদি জমির পরিমাণ অনেকাংশেই কমে যাচ্ছে।

এদিকে জেলা মৎস্য অধিদফতরের উপপরিচালক দিলীপ কুমার জানান, জেলায় মৎস্য খামারের বাণিজ্যিক পুকুরের সংখ্যা এক লাখ ৭৫ হাজার ৭২৫টি। অবাণিজ্যিক পুকুরের সংখ্যা ৯২ হাজার ১৮৭ টি। মৎস্য চাষির সংখ্যা এক লাখ ১১ হাজার ৬৯৫ জন। মাছ উৎপাদন হয় চার লাখ ২৫৬৮ মেট্রিক টন। চাহিদা রয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার ৫৪ মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত মাছের পরিমাণ দুই লাখ ৭৬ হাজার ৫১৪ মেট্রিক টন। দিন দিন বাড়ছে মাছচাষির সংখ্যা। মাছের উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় উদ্বৃত্ত মাছ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে।
অপরিকল্পিতভাবে মাছচাষির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।