নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কর্মরত সব সাংবাদিক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ভাস্কর্যের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধনে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক তৈয়ব শাহনুর বলেন, ‘ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল লেগেই থাকে। এসবকে কেন্দ্র করে তারা অস্ত্রের মহড়াসহ প্রায়ই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। গতকালও তাই হয়েছিল। সেখানে ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় অনেক সাংবাদিক। এই সাংবাদিকরা যেন তাদের অপকর্ম, তাদের নগ্নরূপ তুলে ধরতে না পারেন তাই তাদের প্রতিহত করতেই এই হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করলেও ছাত্রলীগ ট্যাগ ইউজ করে বেঁচে যায়। অথচ এরা ছাত্রলীগের কোনোরকম নীতি আদর্শ কখনও প্রদর্শন করেনি। এরা বারবার বহিষ্কৃত, তবু এরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোরাফেরা করে,  হলেও থাকে। প্রশাসন যদি এদের বিরুদ্ধে এবারও কড়া সিদ্ধান্ত না নেয় তাহলে প্রশাসনের মেরুদণ্ড নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলবে।’

মানববন্ধনে মোকছেদুল মোমিন বলেন, ‘এই সন্ত্রাসীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অতীতেও নানা ধরনের অপকর্ম করেছে। এদের নামে বড় বড় পত্রিকায় বারবার নিউজ হয়েছে। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এদের বিষয়ে নমনীয় আচরণ করে আসছে।’

মোস্তাফিজুর রহমান নোমান বলেন, ‘প্রশাসনের উপস্থিতিতে এরা যে ধরনের নৃশংসতা দেখিয়েছে, তাতে এদের ছাত্র কিংবা ছাত্রলীগ, কোনোটিই বলার সুযোগ নেই। এরা সন্ত্রাসী, আর এরা নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করে। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কি তাহলে সন্ত্রাসী লালন-পালন করে? যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই সন্ত্রাসীদের যথোপযুক্ত বিচার না করে, যদি সন্তোষজনক ফলাফল না আসে, তাহলে চরম পরিণতি হবে। ত্রিশাল প্রেসক্লাব, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন সহ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায় থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তারা সবাই একযোগে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করবে।’

মানববন্ধনের পর জড়িতদের, স্থায়ী বহিষ্কার, গণমাধ্যমে সিসিটিভি ফুটেজ প্রদান, গণমাধ্যমে প্রশাসনের বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহার, সন্ত্রাসীদের বর্তান অবস্থান ব্যাখ্যা এবং আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের আল্টিমেটামসহ পাঁচ দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের গণস্বাক্ষরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের নেতাকর্মীদের অতর্কিত হামলার শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত দুই সাংবাদিক। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীবকে হামলা করা হয় সমিতির অফিসের সামনেই। এরপর সমিতির সভাপতি মো. ফাহাদ বিন সাঈদ তাকে উদ্ধার করতে এলে তাকেও জয়ধ্বনি মঞ্চের সামনে বেধড়ক পেটানো হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ত্রিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি খুরশিদুল আলম মুজিব, সাধারণ সম্পাদক এইচ এম জোবায়ের হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান সেলিম, আরেক সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নোমান, ত্রিশাল বার্তার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সময় টেলিভিশনের ময়মনসিংহ ব্যুরো চিফ সাদিকুর রহমান, মানবকণ্ঠের প্রতিনিধি মো. সেলিম, ত্রিশাল প্রেস ইউনিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম তুহিন, বিজনেস বাংলাদেশের ত্রিশাল প্রতিনিধি নুরুদ্দিনসহ ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকরা।

এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি, প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ফোরামের সাংবাদিকসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।