রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসকদের ওপর হামলা, ৮ ঘণ্টা পর মরদেহ হস্তান্তর

জামালপুরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মৃত রোগীর স্বজনদের হামলায় ইন্টার্ন চিকিৎসক আহতের ঘটনায় কর্মবিরতি শুরু করেছে ইন্টার্নরা।

এই ঘটনায় মৃত রোগীর ছেলেকে পুলিশ আটক করে ও ৮ ঘণ্টা পর স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সোমবার (১১ মার্চ) মধ্যরাতে জামালপুর পৌর এলাকার রশিদপুর গ্রামের মমতাজের ছেলে গুল মাহমুদকে (৬২) অসুস্থ অবস্থায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে তার স্বজনরা। পরে রোগীকে মেডিসিন ওয়ার্ডে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রোগীর স্বজনরা চিকিৎসকের ওপর চড়াও হয়। এ সময় অন্য ওয়ার্ড থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা মেডিসিন ওয়ার্ডে গেলে তাদের ওপরও স্বজনরা হামলা করে ও চিকিৎসকদের কক্ষ ভাঙচুর করে। এতে ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. মঞ্জুরুল হাসান জীবন, ডা. ফাহমিদুল ইসলাম ফাহাদ ও ডা. তুষার আহমেদ আহত হয়।

চিকিৎসকদের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করে মৃতের স্বজনরা জানায়, মৃত্যুর পর গুল মাহমুদের মরদেহ হাসপাতালে না পেয়ে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে তার দুই ছেলে হায়দার ও হাফিজের সঙ্গে হাসপাতালের স্টাফদের বাগবিতণ্ডা হয়। এই কারণে মধ্যরাতে মৃত্যু হলেও মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর পর্যন্ত মরদেহ আটকে রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ছেলেকে গ্রেফতার করা হলে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে অভিযোগ করে স্বজনরা।

অপরদিকে, সকল হামলাকারীদের গ্রেফতার, শাস্তি ও ইন্টার্নদের নিরাপত্তার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। এই ঘটনায় হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান সোহান জামালপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

পরে মঙ্গলবার দুপুরে মৃতের ছেলে হায়দার হাসপাতালে তার বাবার মরদেহ নিতে আসলে পুলিশ তাকে আটক করে। রাত সাড়ে তিনটার দিকে মৃত্যু হলেও মৃত গুল মাহমুদের ছেলেকে পুলিশ আটক করায় ৮ ঘণ্টা পর দুপুর ১২টার দিকে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীকে আনার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করাতে রোগীর দুই ছেলে হায়দার ও হাফিজ চিকিৎসকদের ওপর হামলা করে ও চিকিৎসকদের কক্ষ ভাঙচুর করে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করেছি। ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা তাদের নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছে। ইন্টার্নদের কর্মবিরতির জন্য চিকিৎসাসেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে অন্যান্য চিকিৎসকদের দিয়ে সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মৃত ব্যক্তির নিকট আত্মীয় না থাকায় মরদেহ হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। যখন স্বজনরা এসেছে তখন তাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।’

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মহব্বত কবীর বলেন, ‘এই ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। একজনকে আটক করা হয়েছে। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’