ছাত্রকে শিক্ষকের ধমক, প্রতিবাদে ‘ঘণ্টা বাজিয়ে’ ছাত্রলীগ নেতার কলেজ ছুটির চেষ্টা

জামালপুরে ছাত্রকে ধমক দেওয়াকে কেন্দ্র করে এক কলেজশিক্ষক ও ছাত্রলীগ নেতার মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এর জেরে ছুটির ঘণ্টা বাজিয়ে কলেজ ছুটির চেষ্টাসহ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) দুপুরে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে এই ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নিয়ামুল হক তার বিভাগে অন্যান্য শিক্ষকদের বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা প্রদানের সময় আশেক মাহমুদ কলেজ শাখা ছাত্রলীগের উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক নিজামুল একই বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের দুই ছাত্রকে নিয়ে বিভাগীয় প্রধানের কাছে যান। এ সময় কিছু কথা আছে বলে পাশের বিভাগীয় প্রধানের কক্ষে নিয়ে আসেন। এ সময় ওই ছাত্রলীগ নেতা তার সঙ্গে থাকা দুই ছাত্রকে চিনে রাখা ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় টাকা কম নেওয়ার জন্য অধ্যাপক নিয়ামুল হককে বলেন।

এতে বিভাগীয় প্রধান ছাত্রলীগ নেতাকে বলেন, ‘তুমি কি তাদের অভিভাবক?’ এরপর ওই দুই ছাত্রকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘তোমাদের কথা থাকলে সরাসরি আমাকে বলবে।’ পরে ছাত্ররা সেখান থেকে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তন্ময় বেশ কিছু ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নিয়ামুল হকের কাছে যান। এ সময় বিভাগীয় প্রধান ও অন্যান্য শিক্ষকরা পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করছিলেন। তখন ছাত্রলীগ নেতা তন্ময় বিভাগীয় প্রধানের কাছে জানতে চান, কেন ওই ছাত্রদের ধমক দেয়া হয়েছে? এ সময় পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর উল্লেখ করে বিভাগীয় প্রধান ছাত্রলীগ নেতা তন্ময় ও অন্যান্যদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে ওই শিক্ষক ও ছাত্রলীগ নেতার মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়।

পরে ছাত্রলীগ নেতা তন্ময় সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন এবং তার নির্দেশে ছুটির ঘণ্টা বাজিয়ে কলেজ ছুটি দেওয়ার চেষ্টা করেন কর্মীরা। এরপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অধ্যাপক নিয়ামুল হকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় রসিদ ব্যতীত টাকা নেওয়ার প্রতিবাদে কলেজে বিক্ষোভ করেন।

এ ব্যাপারে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নিয়ামুল হক দুই ছাত্রকে ধমক দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমি সে সময় পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন ছিলাম। তবে ছাত্রলীগ নেতারা কলেজের ছুটির ঘণ্টা বাজিয়ে সরকারি কাজে হস্তক্ষেপ করে অন্যায় করেছে।’

এ ব্যাপারে আশেক মাহমুদ কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তন্ময় কলেজের ছুটির ঘণ্টা বাজানোর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে রসিদ ব্যতীত টাকা না নেওয়া এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের টাকা মওকুফ করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।’

বিষয়টি নিয়ে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে তা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’