জামায়াতের দুই নেতাকর্মীকে মারধরের পর গলায় জুতার মালা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

জামালপুরের মাদারগঞ্জে আল আকাবা নামের একটি সমবায় সমিতির গ্রাহকদের টাকা আত্মসাত ও দোকানের মালামাল সরানোর অভিযোগে জামায়াতের দুই নেতাকর্মীকে আটক করে মারধরের পর গলায় জুতার মালা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১৭ মে) রাতে উপজেলার বালিজুড়ি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

মারধরের শিকার দুজন হলেন- জামালপুর শহর জামায়াতের আমির মোকাদ্দেস হোসেন ও জামায়াতের সমর্থক মিজানুর রহমান সুমন। মোকাদ্দেস হোসেন দাবি করেছেন, ওই দোকানে তার অংশিদারিত্ব রয়েছে এবং সমিতিতে চাকরি করেন। রবিবার বিকালে তাদের জামালপুর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

আল আকবা সমবায় সমিতির সমিতির গ্রাহক রকিবুল ইসলাম আ. রহিম বলেন, ‌‘শনিবার গভীর রাতে বালিজুড়ি বাজারে আল আকাবা সমবায় সমিতির অফিসের নিচতলায় সমিতি পরিচালিত আল ওয়ান এ নামের তৈরি পোশাকের দোকান থেকে দুজনে গোপনে কয়েক লাখ টাকার মালামাল সরানোর চেষ্টা করেন। সংবাদ পেয়ে গ্রাহকরা তাদের মালামালসহ আটক করে ওই দোকানে বেঁধে রাখেন। পরে গণপিটুনি দিয়ে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন সমিতির বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।’ 

সমিতির আরেক গ্রাহক আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক হাজার গ্রাহকের ৭০০ কোটি আমানত আত্মসাৎ করে পালিয়েছেন সমিতির কর্মকর্তারা। তারা উচ্চ হারে সুদের লোভ দেখিয়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে এক বছর আগে থেকে অফিস বন্ধ করে গা ঢাকা দেন। তাদের পরিচালিত এই দোকান থেকে মালামাল সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করায় দুজনকে আটক করে গণপিটুনি দেন গ্রাহকরা।’

এদিকে, গণপিটুনি দিয়ে তাদের গলায় জুতার মালা পরানোর একটি ভিডিও শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে উপজেলাজুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। 

ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ভবনের মধ্যে ওই দুজনকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের দুজনের গলায় জুতার মালা পরানো আছে। কেউ একজন তাদের ভিডিও করছিলেন। পাশ থেকে অনেকেই তাদের কাছে টাকা চাচ্ছিলেন।

জামায়াতে ইসলামীর জামালপুর জেলা শাখার আমির আবদুস ছাত্তার বলেন, ‘মোকাদ্দেস শহর শাখার আমির। তিনি ওই সমিতির কিছুই নন। ওই সমিতির পরিচালিত একটি দোকানের ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করেন। তাকে অন্যায়ভাবে আটক করে তার সম্মানহানি করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে জামালপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘শহর জামায়াতের আমির মোকাদ্দেস হোসেন আল ওয়ান-এ নামের তৈরি পোশাকের ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সেই প্রতিষ্ঠানের মাদারগঞ্জ শাখায় মালামাল আনতে গেলে সমিতির গ্রাহকরা তাকে আটক করেন। আটকের পর তার সঙ্গে যা হয়েছে, তা অন্যায় এবং অপরাধ। কাউকে এভাবে লাঞ্ছিত করার অধিকার কারও নেই। আর ওই সমিতির আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জামায়াতের নেতারা জড়িতও নয়। সেটি অন্যের প্রতিষ্ঠান। যারা জামায়াত নেতাকর্মীর সঙ্গে অন্যায় করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন বলেন, ‘শনিবার রাতে সমবায় সমিতির গ্রাহকরা ওই দুজনকে থানায় সোপর্দ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রবিবার তাদের জামালপুর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’