মাথায় আঘাতের কারণে রাবি শিক্ষার্থী লিপুর মৃত্যু: চিকিৎসক

মোতালেব হোসেন লিপুমাথায় বড় ধরনের আঘাতের কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোতালেব হোসেন লিপুর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক। বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত শেষে বিকাল ৩টার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক ডা. এনামুল হক এ তথ্য জানান।

ডা. এনামুল হক জানান, লিপুর মাথায় ডান পাশে বড় ধরনের আঘাতের চিহ্ন আছে। যার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। আর বুকের দু’পাশে দুটো হাড় ভেঙে গেছে। শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের আর কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নবাব আব্দুল লতিফ হলের ডাইনিং-এর পাশের এক ড্রেনে লিপুর লাশ দেখতে পান হলের এক কর্মচারী। পরে পুলিশকে জানালে সাড়ে ১০টার দিকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মেডিক্যালে নেয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এ ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। পরে লিপুর রুমমেট মনিরুল ইসলাম ও প্রদীপ নামের এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হলের দক্ষিণ ব্লকের প্রায় দুই হাত দূরে একটি ড্রেনে লিপুর লাশ পড়ে আছে। অর্ধ-উলঙ্গ অবস্থায় তার মাথাটা বাম দিকে হেলে ছিল।

তার সহপাঠীরা জানান, কোনও রাজনীতিক সংগঠনের সঙ্গে লিপু জড়িত ছিল না। প্রথম বর্ষে ভর্তির পর ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার ওপর ঝোঁক ছিল তার। কিন্তু পরে সাংবাদিকতা থেকেও সরে আসেন। এছাড়া কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত বা অন্য কোনও দ্বন্দ্ব ছিল না। তবে গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল বলে জানান সহপাঠীরা। কিন্তু আত্মহত্যা করার মতো মানসিকতা লিপুর ছিল না বলে মনে করছেন সহপাঠীরা।

মোতালেব হোসেন লিপুর বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ডু থানার মকিমপুর গ্রামে। পিতার নাম বদর উদ্দিন। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হন। ২০১৪ সালে প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৫ সালে দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হন। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় নূন্যতম ক্রেডিট না পাওয়ায় তাকে পুনরায় দ্বিতীয় বর্ষে থাকতে হয়। আগামী ২ নভেম্বর লিপুর দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত আছে। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন লিপু।

লিপুর এক সহপাঠী শহিদুল ইসলাম বলেন, গত পরশু (মঙ্গলবার) রাতে তার সঙ্গে আমার কথা হয়। তখন সে আমার কাছে পরীক্ষার নোট-পত্রের খোঁজ-খবর করছিল। পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন জানান শহীদুল।

জুলেখা পারভীন নামের এক সহপাঠী বলেন, ‘প্রথম বর্ষে যখন সে ছিল, তখন এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের কথা আমাকে বলেছিল। কিন্তু আত্মহত্যা করার মতো মানসিকতা তার ছিল না।’ তার মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান জুলেখা।

অন্য এক সহপাঠী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘গল্প-গুজব আর আড্ডা দিতে খুব পছন্দ করতো লিপু। যেখানে আড্ডা সেখানেই সে থাকবে। সহপাঠীদের মামা বলে ডাকতো লিপু।’

এদিকে, ময়নাতদন্ত শেষে ৩টার দিকে লিপুর লাশ বিভাগের শিক্ষকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার একরামুল হক বলেন, ‘তদন্ত শুরু হয়েছে। আটক দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এছাড়াও ঘটনাস্থল ও লিপুর কক্ষ থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা হবে। আর ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে অনেক তথ্য জানা যাবে।’

আরও পড়ুন:
রাবিতে শিক্ষার্থীর রক্তাক্ত লাশ

/বিটি/