‘৩ যুবলীগ কর্মীকে তুলে নেওয়া হয়েছিল র‌্যাব পরিচয়ে’

অপহরণের প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর নাটোর পৌর যুবলীগের তিন কর্মীর গুলিবিদ্ধ লাশ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।নিহতদের পরিবারের দাবি, দুটি মাইক্রোবাসে কালো পোশাকে থাকা দুর্বৃত্তরা র‌্যাব পরিচয়ে একটি চায়ের দোকান থেকে তাদের তুলে নিয়ে যায়।সাব্বির, আব্দুল্লাহ ও সোহেল রানা


নিহত যুবলীগ কর্মী রেদোয়ান আহমেদ সাব্বিরের মা রুখসানা বেগম জানান, ৩ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে র‌্যাব পরিচয়ে একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত সাব্বিরসহ তিনজনকে অপহরণ করে। তাদের নিয়ে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা র্যা বের পরিচয়পত্রও দেখিয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন।
নিহত আব্দুল্লাহ ও সোহেলের পরিবারের সদস্যরাও একই দাবি করেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে র‌্যাব-৫ নাটোর সিপিসি-২ এর কমান্ডার এএসপি মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘ র‌্যাব-৫ এর নাটোর, বাগমারা বা রাজশাহী অফিসের কোনও দল ওই তিনজনকে অপহরণ,আটক বা গ্রেফতার করেনি।’
এদিকে, নাটোর পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাঈম হোসেন উজ্জ্বল দাবি করেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কোনও সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘সাব্বিরের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন জনের দ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু তারা এমন সাহস পাবে না যে, তিনজনকে নাটোর থেকে অপহরণ করে সুদূর দিনাজপুরে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে যাবে। তবে সাব্বির যেহেতু স্থানীয় এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের অনুসারী, তাই কোনও প্রতিপক্ষ এই ঘটনায় ইন্ধন দিতে পারে।’নিহত স্বজনদের আহাজারি
নাটোর সদর আসনের এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল জানান, ৩ ডিসেম্বর সাব্বিরসহ তিনজনকে তকিয়া-ঢালান এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়। এরপর থেকে তাদের আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। সোমবার সকালে দিনাজপুরে তাদের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানা যায়। তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। অনতিবিলম্বে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দাসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান শফিকুল ইসলাম শিমুল।
নাটোর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, নাটোর ট্রাক-ট্যাঙ্কলরি ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নেতা হাবিবুর রহমান চুনু বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিনি ঘটনাস্থল তকিয়া-ঢালান এলাকার স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তারা তাকে জানিয়েছেন, দুটি মাইক্রোবাসে কালো পোশাকে ১৫-১৬ জন সাব্বির, আব্দুল্লাহ ও সোহেলকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তবে তারা প্রকৃত র্যা ব নাকি র্যাাবের ছদ্মবেশে কোনও সন্ত্রাসী বাহিনী তা স্পষ্ট নয়।
এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। লাশ বুঝে নিতে ইতোমধ্যে স্বজনরা দিনাজপুর পৌঁছেছেন। সাব্বির নাটোর ট্রাক-ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সদস্য হওয়ায় সমিতির পক্ষ থেকে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও দিনাজপুরে গেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।Natore pic3
গত ৩ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে নাটোর পৌর যুবলীগ আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, শহরের কানাইখালী মহল্লার সোনা মিয়ার ছেলে রেদোয়ান আহমেদ সাব্বির (২৮), একই মহল্লার লুৎফর রহমানের ছেলে পৌর যুবলীগকর্মী আব্দুল্লাহ (২৭) এবং পৌর যুবলীগকর্মী শহরের উত্তর-বড়গাছা এলাকার কালুর মোড়ের মৃত কালুর ছেলে সোহেল (২৬) ব্যবসায়িক কাজে তকিয়া-ঢালান এলাকায় যান। কাজ শেষে তারা স্থানীয় মান্নানের চায়ের দোকানে চা পান করছিলেন। হঠাৎ ১৫-১৬ জনের একদল দুর্বৃত্ত একটি সাদা ও একটি কালো রঙের হাইএস মাইক্রোবাসে চড়ে সেখানে যায়। তারা তিনজনকে মারপিট করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে রাজশাহীর দিকে রওনা দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে পরিবারের সদস্য ও পৌর যুবলীগ নেতারা নাটোর ও রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় যোগাযোগ করেও তাদের কোনও সন্ধান করতে পারেননি। সোমবার সকালে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এলাকায় তারা অপহৃতদের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধারের বিষয়টি জানতে পারেন।
নিহত সাব্বিরের বিরুদ্ধে সদর থানায় ১২টি হত্যা মামলা এবং সোহেলের বিরুদ্ধে হত্যা ও অপহরণসহ ৩টি মামলা রয়েছে বলে দাবি করেছেন সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান।
ওসি মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান,এখনও এ ব্যাপারে মামলা হয়নি। মামলা হলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, তবে অপহরণের পর রবিবার রাতে (৩ ডিসেম্বর) সাব্বিরের মা রুখসানা বেগম সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
/বিটি/এএআর/