চিকিৎসা জটিল হলেই কৌশলে রেফার্ড!

SIRAJGANJ sadar hospiral Photo-02 (07-01-17)সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে বর্তমানে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসকের কৃত্রিম সংকট চলছে। ফলে দুর্ঘটনা বা জটিল রোগী ভর্তি হলে উন্নত চিকিৎসার নামে প্রায়ই তাদের অন্যত্র রেফার্ড করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ৬ জানুয়ারি (শুক্রবার) রাতে দুর্ঘটনা কবলিত পাঁচজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও বিশেষজ্ঞ অ্যানেসথেসিস্ট না থাকায় উন্নত চিকিৎসার অযুহাতে তাদের তিনজনকে ঢাকায় রেফার করা হয়। ঢাকায় পাঠানোর আগেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ধোপাকান্দি গ্রামের গোলাম হোসেন (৬৫) এবং ঢাকা নেওয়ার পথে একই উপজেলার হায়দারপুর গ্রামের শেখ আহম্মেদ আলী (৬০) মারা যান। এদিকে, অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক সংকটের মধ্যে শনিবার সদর হাসপাতালের নতুন সম্প্রসারিত ভবন চালু হলে রোগীর চাপ আরও বাড়ে।

জানা গেছে, কয়েকদিন আগে সদর হাসপাতালের ডিপ্লোমাধারী অ্যানেসথেসিস্ট ডা. আব্দুর রাজ্জাক অবসরে যান। এর আগে অপর অ্যানেসথেসিস্ট ডা. কমল ফাউন্ডেশন ট্রেনিং-এ ঢাকা গেছেন। তাদের পদের বিপরীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নতুন ডিপ্লোমাধারী অভিজ্ঞ দুজন এনেথেসিস্ট চিকিৎসককে রংপুর ও নওগাঁ থেকে বদলি করা হলেও অজ্ঞাত কারণে তারা এখনও যোগদান করেননি।

অপরদিকে, হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র শিক্ষক ও ডিপ্লোমাধারী অ্যানেসথেসিস্ট ডা.সেলিম-আল-মামুনকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সাময়িক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ডিপ্লোমাধারী অপর অ্যানেসথেসিস্ট ও জুনিয়র চিকিৎসক রাজিবুল ইসলামকে রবিবার আনা হয়েছে। কিন্তু, রোগীদের অজ্ঞান করার কাজে তাদের ওপর এখনও পুরোপুরি আস্থা পাচ্ছেন না হাসপাতালের সার্জারি ও অর্থপেডিক বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসকরা। এজন্য সার্জারি বা অপারেশনের রোগী পেলে বা ঝুঁকির সম্ভাবনায় তাদের কৌশলে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়।

হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ইনচার্জ ও শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রব্বান তালুকদার বলেন, ‘ডিপ্লোমাধারী দুজন চিকিৎসক অবসর ও প্রশিক্ষণে যাওয়ায় বিশেষজ্ঞ অ্যানেসথেসিস্ট চিকিৎসকের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইমারজেন্সি অবটেটিক কেয়ার (ইওসি)’র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দু’জন চিকিৎসককে শাহজাদপুর ও আমাদের মেডিক্যাল কলেজ থেকে সাময়িক দায়িত্ব দেওয়া হলেও তাদের ওপর পুরোপুরি আস্থা না পাওয়ায় জটিল অপারেশন আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।’

সিভিল সার্জন কাম হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শেখ মো. মঞ্জুর রহমান বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ অ্যানেসথেসিস্ট চিকিৎসকের একজন অবসরে, অপরজন প্রশিক্ষণে। দু’জন বিশেষজ্ঞ অ্যানেসথেসিস্ট চিকিৎসককে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নওগাঁ ও রংপুর থেকে বদলি করা হলেও একজনের আদেশ বাতিল হয়েছে। অপরজন যোগদান করেননি। বিকল্প হিসেবে শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ ও শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল থেকে দুজন জুনিয়র চিকিৎসককে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্টরা তাদের ওপর আস্থা না পাওয়ায় বর্তমানে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।’

সিরাজগঞ্জ শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, বায়োকেমিস্ট্রির প্রভাষক ডা. সেলিম-আল-মামুনকে সাময়িক দায়িত্ব দেওয়া হলেও রোগীদের অজ্ঞান করনের ক্ষেত্রে তার ডিপ্লোমা বা বিশেষজ্ঞ ডিগ্রী নেই। ছয় মাসের শুধু ইমারজেন্সি অবটেটিক কেয়ার (ইওসি)’র প্রশিক্ষণ থাকলেও সেটা অনেক দিন আগের। অতটা দক্ষও তিনি নন। ছোটখাট অপরেশনে তাকে ব্যবহার করা যেতে পারে। বড় অপারেশনে কোনও দুর্ঘটনা বা রোগীর মৃত্যু ঘটলে কে এসবের দায়িত্ব নেবে। তাই এ হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ অ্যানেসথেসিস্ট প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন:
উত্তরার কিশোররা মেতেছে ‘ভয়ঙ্কর খেলায়’

/বিটি/