বগুড়ায় অসহনীয় লোডশেডিং, শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত

ছবি: সংগৃহীতপ্রচণ্ড গরমে এমনিতেই নাকাল বগুড়াবাসী তার ওপর অসহনীয় লোডশেডিংয়ে এখানকার মানুষের জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বগুড়ায় চাহিদার অর্ধেকও বিদ্যুৎ মিলছে না। এতে জেলার সর্বত্র ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে জনগণের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জনগণ ও ব্যবসায়ীরা অবিলম্বে এ অচলাবস্থা নিরসনে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অন্যথায় বিদ্যুতের দাবিতে ভুক্তভোগীরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ায় কিছুদিন ধরে অসহনীয় লোডশেডিং শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিক্রি ও বিতরণ বিভাগ-৩ এর অবস্থা শোচনীয়।গাছের পাতা নড়লেই বিদ্যুৎ চলে যায়। অনির্ধারিত লোডশেডিংয়ের কারণে অনেক এলাকার বাসাবাড়িতে খাওয়া-গোসল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। শহরের ভিআইপি এলাকা ছাড়া এমন কোনও এলাকা নেই যেখানে দিনরাতে ৮-৯ বার লোডশেডিং হচ্ছে না।

বিসিক শিল্পনগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানায় বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন কমে গেছে। বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন ব্যয়। ঘণ ঘণ লোডশেডিংয়ের কারণে জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে।

বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান (রাকসুর সাবেক ভিপি) হায়দার আলী জানান, বিদ্যুৎ নিয়ে সাবোটাজ চলছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন,`সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন দাবির সঙ্গে সরবরাহের কোনও মিল নেই।’

শহরের সুলতানগঞ্জপাড়া এলাকার গৃহবধূ সাবেক পৌর কাউন্সিলর ডালিয়া নাসরিন রিক্তা জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবনে অশান্তি নেমে এসেছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে।

একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নাসরিন চৌধুরী জানান, ঘণ ঘণ লোডশেডিংয়ের কারণে বাড়িতে ও কর্মস্থলে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। তারা এ অচলাবস্থা নিরসনে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি এনামুল হক দুলাল জানান, প্রধানমন্ত্রী বলছেন, দেশে চাহিদার বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তাই বিদ্যুতের কোনও সংকট হওয়ার কথা নয়।

এনামুল হক সন্দেহ করছেন, বিদ্যুৎ বিভাগের কেউ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সাবোটাজ করছে। তাই এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদন্ত করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্প, কল-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ট্রান্সফরমারসহ মূল্যবান ইলেকট্রিক সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আকাশে মেঘ দেখলেই লোডশেডিং হচ্ছে। তাই ক্ষতিগস্ত্র বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসক এবং চেম্বারে অভিযোগ করেছেন। তিনি চেম্বারের পক্ষে বর্তমানে ও রমজানে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকার প্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বগুড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুর রশিদ জানান, কয়েকদিন আগে ঝড়ে ভৈরবে টাওয়ার পড়ে যাওয়া, কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকা ও সিরাজগঞ্জ, পাবনার বেড়া এবং বড় পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে। বর্তমানে বগুড়ায় ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ মিলছে ৯০ থেকে ৯৫ মেগাওয়াট। ফলে জেলার সর্বত্র আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা পর্যায়ক্রম লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, টাওয়ার মেরামত ও উৎপাদন কেন্দ্রগুলো চালু হলেই সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহা-পরিচালক আবদুল মতিন জানান, ৬টি উপজেলায় ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা থাকলেও সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ৩৫-৩৬ মেগাওয়াট। তাই পর্যায়ক্রমে এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরবরাহ স্বাভাবিক হলে লোডশেডিং দূর হবে। ভুক্তভোগী বগুড়াবাসী অবিলম্বে লোডশেডিং বন্ধ করতে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অন্যথায় তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন বলে জানিয়েছেন।

/এআর/