লিপু হত্যার এক বছরেও চার্জশিট হয়নি, তদন্তে অবহেলার অভিযোগ

মোতালেব হোসেন লিপুরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপু হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়নি এক বছরেও। আবাসিক হলে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের চার্জশিটও দিতে পারেনি পুলিশ। এর মধ্যে মামলার তদন্তভার দুই জনের হাত বদল হয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) এসেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লিপুর পরিবার ও সহপাঠীরা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আসমাউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্তে তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি। তবে আমাদের তৎপরতা চলছে, একটু সময় লাগবে। আশা করা যায়, দ্রুত ভালো কিছু জানাতে পারবো।’

হত্যার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হত্যার কারণ এখনও জানা যায়নি। প্রক্সি জালিয়াত চক্রের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। কিন্তু আমরা নিশ্চিত কিছু বলতে পারছি না।’

এদিকে, হত্যার সুষ্ঠু তদন্তে অবহেলার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করেছেন লিপুর সহপাঠী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বেলা ১২টার দিকে বিভাগের সব বর্ষের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে লিপু চত্বরের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।

মানবন্ধনে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, ‘লিপু হত্যার তিন মাসে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই তাদের হাতে এসেছে, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারপর সেই কর্মকর্তারাও চাকরি সূত্রে বদলি হয়েছেন। এর মধ্যে এক বছর হয়ে গেছে, কিন্তু দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতি আমরা পেলাম না। এসব টালবাহানা আর কত? প্রশাসনের ওপর আমাদের আস্থা যেন থাকে, এ জন্য আসামিদের দ্রুত বিচারে আওতায় নিয়ে আসুন।’

লিপু হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধনবিভাগের শিক্ষার্থীরা মামলার তদন্তে ধীরগতির অভিযোগ এনে বলেন, ‘আজ  লিপুর আমাদের সঙ্গে ক্লাস করার, আড্ডা দেওয়ার, স্বপ্ন দেখার কথা ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্নকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে নির্মমভাবে। আবাসিক হলের ভেতরে তাকে খুন হতে হয়েছে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন এখনও চুপ। এখন হত্যার কোনও ক্লু, মোটিভ কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, ‘আমরা জানতে চাইলে তারা আমাদের বারবার আশ্বস্ত করে। এভাবেই এক বছর কেটে গেছে। এই এক বছরে মামলার দুইজন তদন্ত কর্মকর্তার বদলি ছাড়া কিছুই হয়নি।’

এ সময় দ্রুত তদন্ত শেষ করে প্রকৃত আসামিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

এদিকে, লিপুর চাচা মো. বশীর উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক বছর হয়ে গেল, পুলিশ তো কিছুই জানায়নি। লিপুর মৃত্যুর তিনদিন পর একবার এসে কথা বলে লেখালেখি করে নিয়ে গেছে পুলিশ। আর আসেনি, কিছু জানায়নি। জানি না, কী হবে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের ড্রেন থেকে লিপুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের দিন তৎকালীন রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার, পিবিআই, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। লিপুকে হত্যা করা হয়েছিল বলে ওই সময় পুলিশ ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ওইদিন বিকালে লিপুর চাচা মো. বশীর বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

লাশ উদ্ধারের দিন লিপুর রুমমেট মনিরুল ইসলামকে আটক করা হয়। তিনদিন পর হত্যা মামলায় মনিরুলকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। কিন্তু ৮ নভেম্বর জজকোর্ট থেকে মনিরুল জামিন পায়। জামিনের আগে মনিরুলকে চারদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ডে মনিরুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যার রহস্য উদঘাটন সম্ভব বলে তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা অশোক চৌহান দাবি করেছিলেন। এরপর মামলার তদন্তভার মতিহার থানার তদন্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসান চান। সর্বশেষ চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।

আরও পড়ুন- কবে চালু হবে ‘৯৯৯’