আমের মুকুলের চিন্তায় রাজশাহীতে নেই মশা নিধন কার্যক্রম!

ঘরে-বাইরে, অফিস-আদালতে, সবখানে মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে রাজশাহী মহানগরবাসী। অথচ এ অর্থবছরের এ খাতের জন্য বরাদ্দ চার কোটি টাকা বাজেটের মধ্যে ৯ মাসে মাত্র ১৬ লাখ টাকা খরচ করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। সংস্থাটি বলছে, আমের মুকুল ও ধান গাছের কথা ভেবে এতদিন উড়ন্ত মশা নিধনের উদ্যোগ নেয়নি তারা। তবে স্থানীয়রা বলছেন, গাছে মুকুল আসার আগে মশার উৎপাত শুরু হলেও সিটি করপোরেশন তখন ভূমিকা নেয়নি।

জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে মশক নিধনে চার কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দেয় রাজশাহী সিটি করপোরেশন। এরমধ্যে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে মশক নিধনে বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় সাড়ে ৪০ লাখ টাকা। অথচ এর মধ্যে খরচ হয়েছে মাত্র ১৬ লাখ টাকা। অথচ গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মশক নিধনে খরচ হয়েছিল ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

এ বছর বরাদ্দকৃত অর্থের মাধ্যমে শুধুমাত্র মশার লার্ভা নিধনে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এই কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে নগরীর ড্রেনগুলোকে ওয়ার্ড পর্যায়ে ভাগ করে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের তত্ত্বাবধানে কেরোসিন ও ডিজেল ছিটানো। এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে সিটি করপোরেশনের কর্মচীরারা। অথচ জ্বালানির স্বল্পতার কারণে প্রতিদিন করা হয় না। নামমাত্র ছিটানো হয় কেরোসিন ও ডিজেল।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মশক পরিদর্শক মো. সানাউল্লাহ জানান, সিটি করপোরেশন থেকে মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের ওপর  গুরুত্ব দিয়ে লার্ভা নিধন কার্যক্রম পরিচালিত করছে। এজন্য ড্রেন ও নর্দমায়  কেরোসিন ও ডিজেল মিশিয়ে স্প্রে করা হচ্ছে। এর বাইরে মশক নিধনে কোনও কার্যক্রম নেই সিটি করপোরেশনের।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, উড়ন্ত মশা নিধনে কোনও কার্যক্রম পরিচালিত করছে না সিটি করপোরেশন। ফলে এই খাতে বরাদ্দ কোনও অর্থই খরচ করতে হয়নি সিটি করপোরেশনকে। সর্বশেষ গত বছরের মে মাসে উড়ন্ত মশা নিধনে ফগার স্প্রে মেশিন ব্যবহার করা হয়। গত অর্থবছরের বরাদ্দকৃত বাজেটের টাকা দিয়ে সেই মেশিন চালানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সালে সিটি করপোরেশনে ফগার স্প্রে মেশিন ছিলো ১৫টি। তা নষ্ট হতে হতে এখন এসে দাঁড়িয়েছে ৬টিতে। সেগুলোও বহু ব্যবহারে জীর্ণ। পড়ে রয়েছে গুদামঘরে। আর জ্বালানি না থাকায় সেই ছয়টিও ব্যবহার করতে পারছে না সিটি করপোরেশন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল জানান, এ বছর রাজশাহীতে প্রচুর আমের মুকুল হয়েছে। এছাড়া ধানে বীজ আসছে। তাই ফসলের কথা ভেবে ফগার স্প্রে মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে না।

তবে মেয়রের এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা বলছেন, মশার উপদ্রব একদিনে হয়নি। আমের মুকুল আসার আগে থেকেই মশার উৎপাত শুরু হয়েছিল। তখন সিটি করপোরেশন কোনও ভূমিকা নেয়নি।

মেয়র বুলবুলের দাবি মশা নিধনে নতুনভাবে আবার ১৪ দিনের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তার বিশ্বাস আগামি ১৫ দিনের মধ্যে মশা নিয়ন্ত্রণে আসবে। তিনি জানান, মশক নিধনে নগরীর ওয়ার্ড পর্যায়ের সমস্ত ড্রেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, জনগণকে সচেতন করা, লিফলেট বিলিসহ মশার প্রজনন নির্মূলে ড্রেনগুলোতে ওষুধ ছিটানোসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। নতুনভাবে নেওয়া ১৪ দিনের প্রকল্পের আওতায় ড্রেনে আগের চেয়ে বেশি করে ওষুধ ছিটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী ২০ দিনের মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকায় মশক নিয়ন্ত্রণে আসবে।