সরেজমিন দেখা যায়, গণভবনের ৮০ ভাগ এলাকা এখন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা। তাতে স্থান পেয়েছে বানর, ময়ূরসহ দেশি-বিদেশি পাখি। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে সাপের একটি অভয়ারণ্য। এছাড়া রানিমহলে লাগানো দেশি-বিদেশি আকর্ষণীয় ফুলের গাছগুলোতে ফুটে রয়েছে থোকা থোকা ফুল। মাঝে পায়ে হাঁটার রাস্তা রেখে উভয়দিকে ফুলের গাছ লাগানোর ফলে স্থানটি সহজেই দৃষ্টি কাড়ছে পর্যটকদের। পাশেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে লাগানো ‘হৈমন্তী’ গাছটিও এখন ফুলে ফুলে সুশোভিত।
সংগ্রহশালার করিডোরে রয়েছে রাজা প্রমদানাথ রায় ও সস্ত্রীক রাজা দয়ারাম রায়ের ছবি, সঙ্গে রাজবাড়ির সংক্ষিপ্ত বিবরণ। রয়েছে মার্বেল পাথরের রাজকীয় বাথটাব। রাজার পালঙ্ক, ঘূর্ণায়মান চেয়ার, টেবিল, আরাম চেয়ার আর ড্রেসিং টেবিল দিয়ে পাশের ঘরটি যেন রাজার শয়নকক্ষের প্রতিরূপ।
পাশের কক্ষটি রাজকুমারী ইন্দুপ্রভা চৌধুরানির বিভিন্ন সামগ্রীতে সুশোভিত। ইন্দুপ্রভার একটি ছবি রাখা হয়েছে পিতলের একটি ফ্রেমে। আছে তার ব্যক্তিগত ডায়েরি, আত্মজীবনী, পাণ্ডুলিপি, তার কাছে লেখা স্বামী মহেন্দ্রনাথ চৌধুরীর রাশি রাশি চিঠি। পাশেই রয়েছে চিঠিগুলো রাখার পিতলের সুটকেস। দর্শনার্থীদের জন্যে ইন্দুপ্রভার লেখা বঙ্গোপসাগর কবিতাটি ফ্রেমে বাঁধাই করে দেয়ালে টানানো হয়েছে। ৬৭ লাইনের এই কবিতায় তিনি বর্ণনা করেছেন বঙ্গোপসাগরের অপরূপ সৌন্দর্য।
এর বাইরেও সংগ্রহশালার ১০টি কক্ষের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের ব্যবহৃত দৃষ্টিনন্দন সব আসবাবপত্র। এর মধ্যে রয়েছে ডিম্বাকৃতি, গোলাকার, অষ্টভুজাকৃতি, চতুর্ভুজাকৃতি ছাড়াও দোতলা, প্রসাধনী ব্যবহারের উপযোগী ও কর্নার টেবিল। রয়েছে গার্ডেন ফ্যান কাম টি টেবিল।
জানা যায়, ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে দয়ারাম রায় নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে রাজবাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এরপর ১১ বছর ধরে বিদেশি বিশেষজ্ঞ, প্রকোশলী, চিত্রশিল্পী ও কারিগরদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল হিসেবে গড়ে ওঠে আজকের এই নয়নাভিরাম রাজপ্রাসাদ। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাস হওয়ার পর প্রাসাদটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে ১৯৬৬ সালে ইস্ট পাকিস্তান হাউস ও পরে ১৯৬৭ সালে গভর্নর হাউজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানে রাত্রিযাপন করেন এবং এটিকে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চলীয় বাসভবন হিসেবে উত্তরা গণভবন নামকরণ করেন।
এরপর থেকেই প্রতিনিয়তই দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে উত্তরা গণভবনে। রাজপ্রাসাদ, মিনি চিড়িয়াখানা আর সংগ্রহশালা ছাড়াও তারা এখানে দেখতে পারছেন রাজপ্রাসাদের চারপাশ বেষ্টন করে থাকা ১০ ফুট উঁচু সীমানা প্রাচীর, ১৪ একর আয়তনের লেক। আরও দেখতে পাচ্ছেন সিংহদুয়ারের ওপর স্থাপন করা বিশাল ঘড়ির ঘণ্টা, ইতালিয়ান গার্ডেনে শ্বেতপাথরের অপরূপ চারটি ভাস্কর্য, মার্বেল পাথরের আসনসহ সভা মঞ্চ, হৈমন্তী, পারিজাত, ম্যাগনোলিয়াসহ অসংখ্য দুষ্প্রাপ্য বৃক্ষ।
গণভবনকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গণভবনকে ঘিরে নাটোরকে পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তার।
শাহিনা খাতুন বলেন, ‘গণভবনের ভেতরের জলচৌকির ওপরে ঝুলন্ত ব্রিজ, প্রধান ফটকের সামনে সুইমিংপুল, একটি আধুনিক মানের সিনেপ্লেক্স, পর্যটকদের উপযোগী একটি আধুনিক মার্কেট এবং একটি মার্কেট কাম রেস্ট হাউস করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া গণভবনের সংগ্রহশালাটিতে রাজপরিবারের বিভিন্ন সামগ্রী সংযুক্তির পাশাপাশি চিড়িয়াখানাটি আরও সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনাও রয়েছে।’
জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন জানান, সংগ্রহশালাকে সমৃদ্ধ করার জন্য দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন-
চিলমারীতে শতবর্ষী কূপ দখল করে মক্তব নির্মাণ!
রাজশাহীতে রাজস্ব হালখাতায় আদায় ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা
শুরু হয়নি ডুবে যাওয়া কার্গো উদ্ধারের কাজ, এক সদস্যের তদন্ত কমিটি