আদালতের আদেশে ব্যানার টাঙিয়ে ক্ষমা চাইলেন বগুড়ার আওয়ামী লীগ নেতা

হাইকোর্টের নির্দেশে বুধবার বিকালে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি তার বক্তব্য ব্যানারে লিখে নিয়ে গিয়েছিলেন। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘বানাইল মহাশ্মশান নিয়ে সভাপতি এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আর কোনও বিরোধ নেই। আমরা একে অপরের সহযোগিতার ভিত্তিতে সহঅবস্থান করব এবং শান্তিময় পরিবেশের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব।’ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শতবর্ষী শ্মশানের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগে হাইকোর্ট আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হককে ভর্ৎসনা করেছিল। একই সঙ্গে ওই অপকর্মের জন্য স্থানীয় জনগণের কাছে প্রকাশ্যে ব্যানার টাঙিয়ে ক্ষমা চাওয়ার ও তার ছবি আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছিল।Bogra-23-05-18-Picture-04

অজিজুল হক বুধবার বিকাল সোয়া ৫টায় বানাইল শ্মশানে যান। তার ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন ধর্মের বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ সেখানে ভিড় করেন। ক্ষমা চাওয়ার অনুষ্ঠানে আজিজুল হক দাবি করেন, ‘শ্মশান দখল নিয়ে শুরু থেকেই মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। কারণ জায়গাটি আমি কিনেছিলাম। পরে জানতে পারি এটি শ্মশানের। যা হয়েছে, ভুল হয়েছে। এই জায়গা আমার নয়। এখন থেকে এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যা করার করবে। আমি তাদের সহযোগিতা করব।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বানাইল বারোয়ারি শিব মন্দির এবং শ্মশান সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শ্রী কৃষ্ণ মোহন্ত, সাধারণ সম্পাদক দুলাল চন্দ্র সরকার, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাম নারায়ন কানু, সাধারণ সম্পাদক শিশির সাহা, উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রহ্লাদ সরকার, সাধারণ সম্পাদক দুলাল অধিকারি, রতন কুমার রায়, শিক্ষক নিশিকান্ত সাহা, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মির্জারুল আলম চৌধুরি শাহাজাদা, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মান্নান, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান বাদশা, ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ রিজু প্রমুখ।

শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক ২০১৬ সালে বানাইন শ্মশানের ৪ শতক জমি দখল করে সেখানে স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ২৬ জুন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) নামের একটি মানবাধিকর সংগঠন শ্মশানের জমি দখলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। এইচআরপিবি’র চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানান, ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের আদেশ দেন। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্ত করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসক তার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই রুলের ওপর হাইকোর্টের বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হকের দ্বৈতবেঞ্চ গত ১৩ মে শুনানি করেন। শুনানি শেষে ২০ মে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে তলব করাসহ অন্যান্য নির্দেশ দেওয়া হয়। ধার্য তারিখে আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হক আইনজীবী লায়েকুজ্জামান মোল্লার মাধ্যমে আদালতে হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ভর্ৎসনা করে হাইকোর্ট তাকে ব্যানার টাঙিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আদেশ দেয়। একই সঙ্গে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার সময়কার ছবি আদালতে  দাখিল করার নির্দেশ দেয়। আগামী ২৭ মে ওই মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।