পল্লী চিকিৎসক হয়ে গেলেন এমবিবিএস ডাক্তার!





ভুয়া চিকিৎসক মাসুদ রানাবিএ পাস করে নিয়েছিলেন পল্লী চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ। এরপর এমবিবিএস চিকিৎসক পরিচয়ে শুরু করেন প্র্যাকটিস। চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার জন্য ভুয়া কাগজপত্র ও জাল সার্টিফিকেটরও ব্যবস্থা করেন। এসব ব্যবহার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে পান লাখ টাকা বেতনের নিয়োগ। নেন চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ'র (নং-৭৮) আজীবন সদস্যপদ। বিষয়গুলো শুনে সিনেমার গল্প মনে হলেও এমন করেই লোক ঠকানোর কাজ করে আসছিলেন ভুয়া চিকিৎসক মাসুদ রানা। প্রতারণার দায়ে বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

জানা যায়, ভুয়া কাগজপত্র আর জাল সার্টিফিকেটের জোরে ২০১২ সাল থেকে দীর্ঘ সাত বছর পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় হেলথ্ কেয়ার লিমিটেডে চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন মাসুদ রানা। পরে তার বিরুদ্ধে যাবতীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট জাল বলে অভিযোগ উঠলে তিনি পালিয়ে যান। পরে পুলিশ সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করেন।

পাবনা পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, মাসুদ রানার বিরুদ্ধে জাল কাগজপত্র ও সার্টিফিকেট ব্যবহারের অভিযোগ করেন ফেনীর সোনাগাজীর ডা. মো. মাসুদ করিম। তিনি জানান, মাসুদ রানা তার কাগজপত্র ও সার্টিফিকেট জাল করে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন। পরে অনুসন্ধান করে অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. ফিরোজ কবিরকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি পলাতক ও ভুয়া চিকিৎসক মাসুদ রানার অবস্থান নির্ণয় করে নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করেন।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ রানা স্বীকার করেছেন তার সব ধরনের কাগজপত্র ভুয়া ও জাল। এ বিষয়ে পাবনা ভাঙ্গুড়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। এর আগেও ২০০৫ সালে মাসুদ রানা একই ধরনের অপরাধ করে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানায় গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে ওই থানায় একটি মামলা রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ রানা জানান তার বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুরের হাতিখানায়। তার বাবার নাম শেখ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান।

চিকিৎসক মাসুদ করিমডা. মো. মাসুদ করিম বলেন, পাবনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক শুভ ও বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি মাসুদ রানা আমার সার্টিফিকেট জাল করে চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পরে আমি ভাঙ্গুড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র টিএইচও এবং সিভিল সার্জন পাবনা ও ইউএনও ভাঙ্গুড়াকে বিষয়টি জানাই। টিএইচও মাসুদ রানাকে তার শিক্ষগত যোগ্যতা ও চিকিৎসকগত যোগ্যতার কাগপত্র দেখাতে বললে সে ফটো কপি দেখায়। তখন টিএইচও আসল কাগজপত্র দেখাতে বললে সে কাগজপত্র আনার কথা বলে পালিয়ে যায়।

ভূয়া ডাক্তার মাসুদ রানা জানান, ২০০২ সালে ঢাকার টঙ্গীতে ‘সূর্যের হাসি’ প্রতিষ্ঠানে পল্লী চিকিৎসকের কোর্স করি। পরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এমবিবিএস চিকিৎসক পরিচয়ে চিকিৎসা দিয়েছি।

বিএমএ’র আজীবন সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়ে সংগঠনটির পাবনা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. আকসাদ আল মাসুর আনন বলেন, ‌‘এখানে সদস্য হতে নাম আর ছবি হলেই হয়। তাই তদন্তের কোনও প্রয়োজন হয় না। এছাড়া তিনি পাবনার স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দেওয়ায় সদস্যপদ পান।’