নওগাঁয় আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাড়ি নির্মাণে নয়-ছয়ের অভিযোগ

আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা রোকেয়া বেগমের বাড়িবিধবা রোকেয়া বেগমের বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুরের চন্দন নগর ইউনিয়নের ছাতড়া দক্ষিণপাড়া গ্রামে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সংসার চালান। জমি থাকলেও বাড়ি করার টাকা নেই তার। তাই একটি ছাপড়া ঘর বানিয়ে থাকতেন। সরকারের ‘জমি আছে, ঘর নাই’ নামের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি তাকে একটি আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার এক মাস না যেতেই ঘরের চাল দিয়ে এবং মেঝের দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে। জোরে বৃষ্টি আসলে ঘরের আসবাবপত্র ভিজে যায় এবং ঘরে থাকা যায় না। এছাড়া পায়খানা তৈরি করে দেওয়ার কথা থাকলেও তাকে দেওয়া হয়েছে শুধু স্যানেটারি রিং। শুধু রোকেয়া নন, এমন ভুক্তভোগী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ঘর পাওয়া অনেকে।

রোকেয়া বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর অর্থের অভাবে ঘর করতে পারিনি। ছেলে-মেয়েসহ তিনজন মিলে একটি ছাপড়া ঘরে থাকতাম। ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার পর থেকে খুবই সমস্যা। সেজন্য সরকারি ঘর পেয়ে খুবই উপকার হয়েছে। তবে যেভাবে ঘর করে দেওয়া হয়েছে তাতে বৃষ্টি হলে ঘরে থাকতে পারি না। ঘরের মালামাল নিয়ে আসা গাড়ির ড্রাইভার ও মিস্ত্রিরা মিলে ৭০০ টাকা নিয়েছে। টিনের বেড়ার নিচ দিয়ে পানি বন্ধ করতে দুই বস্তা সিমেন্ট কিনতে হয়েছে এবং পায়খানা তৈরিও নিজের টাকায় করতে হয়েছে।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে,এ উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীন পরিবারের জন্য ১৪৪টি আধাপাকা ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ টাকা।

শেফালী রানী বলেন, ‘শুনেছি ঘর করতে এক লাখ করে টাকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ যে মানের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে তাতে ৬০ হাজার টাকার বেশি খরচ হবে না। বাকি টাকাগুলো কার পকেটে গেলো?’

শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের শ্রীমন্তপুর বালুকাপাড়া গ্রামের সোহেল রানা বলেন, তার গ্রামের শাহাজাহানকে যে ঘর করে দেওয়া হয়েছে তার সরঞ্জামগুলো খুবই নিম্নমানের।

অভিযোগ রয়েছে, ঘর বরাদ্দ থেকে শুরু করে ঘর তৈরিতে চলছে নানান অনিয়ম। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে পিলার তৈরি করা হয়েছে। ঘর নির্মাণ শেষ না হতেই পিলার ভেঙে গেছে। দরজা,জানালার কাঠ ফেটে গেছে। জানালার পাল্লা করা হয়েছে দোকানের ঝাঁপ প্রকৃতির। ঘরের টিনের চালের ফ্রেম করা হয়েছে একাধিক জোড়া দেওয়া কাঠ দিয়ে।

এ প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার হলেও পুরো কাজের খরচ ও দেখভাল করেছেন প্রকল্পের সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতা তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকারি নিয়ম মোতাবেক সব বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। নিম্নমানের বাড়ি তৈরি বিষয়টি সঠিক নয়। কোনও প্রকার অর্থ আত্মসাৎ করা হয়নি।

নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়া মারিয়া পেরেরা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছি। পিলার ভেঙে ফেঁটে যাওয়ার বিষয়টি ব্যবহারকারীর ওপর নির্ভর করছে। আর্থিক অভিযোগটি সঠিক নয়। যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ ছিল তা ব্যয় করে কাজ করা হয়েছে।’