দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ পেলো বগুড়ার ১৭৮ পরিবার

01স্বামী মারা যাওয়ার পর পরিবার নিয়ে বগুড়া সদরের শেকেরকোলা ইউনিয়নের ভান্ডারপাইকা গ্রামে বাবার বাড়িতেই থাকতেন ষাটোর্ধ্ব জহুরা বেওয়া। অনুদানের গরু লালন-পালন করে অন্ধ বোনকে সঙ্গে নিয়ে সংসার চালাতেন তিনি। নিজের ছিল না কোনও জায়গা ও ঘরবাড়ি। সেই বৃদ্ধা জহুরা বেওয়া এবার নিজ ঘরে উঠেছেন। বাবার কাছ থেকে পাওয়া চার শতক জায়গার ওপর নির্মাণ হয়েছে সরকারের দেওয়া বাসগৃহ। শুধু জহুরা বেওয়া নয়, তার মতোন জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১৭৮ অসহায় পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে এসব বাসগৃহে।

বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজাহার উদ্দিন জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় দুর্যোগ সহনীয় আধুনিক বাসগৃহ নির্মাণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় বগুড়ায় ১৭৮ পরিবারকে গৃহ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বাসগৃহের প্রাক্কলিত মূল্য ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩১ টাকা। কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, গৃহপরিচারিকা, গৃহকর্মী, রিকশা ভ্যানচালকসহ বিভিন্ন অস্বচ্ছল পরিবার পেয়েছে এই দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ।

বগুড়া সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৬টি বাসগৃহ নির্মাণ হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এগুলো নির্মাণ হয়। গত ১৩ অক্টোবর তা হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতিটি গৃহে দু’টি কক্ষ, দু’টি বারান্দা, একটি রান্নাঘর, একটি করিডরসহ রয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবস্থা। থাকছে টিউবয়েল ও সৌর বিদ্যুতের সুবিধাও।

শেখেরকোলা ইউনিয়নের ভান্ডারপাইকা গ্রামে জহুরা বেওয়া জানান, আগে অন্ধ বোনকে সঙ্গে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতেন। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বাসগৃহে আছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রভাষক কামরুল হাসান ডালিম জানান, জহুরা বেওয়া তার ছেলে, ছেলের বউ ও অন্ধ বোনকে নিয়ে নতুন বাড়িতে উঠেছেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্টে বাবার দেওয়া জায়গায় ঝুপড়ি ঘর করে থাকতেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বাড়ি পেয়ে তারা এখন আনন্দে দিনযাপন করছেন।

রাজাপুর ইউনিয়নের খামারকান্দি গ্রামের রুবেল হোসেনের দুই ছেলেমেয়ে। তার বাবা চাঁন মিয়া ৬ ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকেন খামারকান্দির শ্বশুর বাড়িতে। রিকশাভ্যান চালিয়ে চার শতক জায়গা কিনেছেন অনেক কষ্টে। সেই জমিতে এবার উঠেছে পাকা বাড়ি। বাড়ি পেয়ে খুব খুশি তিনি।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সদর উপজেলায় ১৬টি বাসগৃহ নির্মাণ শেষে হস্তান্তর করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে সুন্দরভাবে কাজ শেষ হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই। এছাড়া সোনাতলা উপজেলায় ২১টি, সারিয়াকান্দিতে ১৯টি, শিবগঞ্জে ১৬টি, আদমদীঘি ও দুপচাঁচিয়াতে ১২টি করে, কাহালু ও শাজাহানপুরে ১১টি করে, নন্দীগ্রাম ও শেরপুর ও গাবতলীতে ১৪টি করে, ধুনটে ১৮টি বাসগৃহ নির্মাণ করা হয়। বগুড়ার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ গত ১৩ অক্টোবর বাড়িগুলো হস্তান্তর করেছেন।’